আলীবর্দী খানের চরিত্র ও কৃতিত্ব ব্যাখ্যা কর।

আলীবর্দী খানের চরিত্র ও কৃতিত্ব ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা: দাক্ষিণাত্যে নিজাম উল মূলক অযোধ্যায় সাদত আলী প্রমুখ ভাগ্যান্বেষীর ন্যায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতের ইতিহাসে নবাব আলীবর্দী খানও অতি সামান্য অবস্থা হতে স্বীয় মেধা ও বিচক্ষণতায় বাংলার মসনদ দখল করতে সমর্থ হন।

 

আলীবর্দী খানের চরিত্র ও কৃতিত্ব নিম্নে আলীবর্দী খানের চরিত্র ও কৃতিত্ব ব্যাখ্যা করা হলো:

 

১. সেনাপতি হিসেবে: বীর যোদ্ধা ও নিপুণ সেনাপতি হিসেবে আলীবর্দী খানের কৃতিত্ব ছিল উল্লেখযোগ্য। গোলাম হোসেনের মতে, “এ যুগের একমাত্র আসফজাহ নিজাম-উল-মূলক ব্যতীত আর কেউ তার সমতুল্য ছিলেন না।”

 

২. কৃষি শিল্পের উন্নতি: নবাব আলীবর্দীর অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব ছিল কৃষি, ব্যবসায় বাণিজ্য ও শিল্পের প্রভূত উন্নতি সাধন। তারই কৃপায় মুর্শিদাবাদে জগৎশেঠ, কলকাতায় উর্মিচাঁদ এবং আরো বেনিয়া, হিন্দু বিত্তশালী হয়ে উঠে।

 

৩. শাসক হিসেবে : নবাব আলীবর্দী শাসক হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দ্বিতীয় মুর্শিদকুলী ও আফগানদের বিদ্রোহ দমন করে রাজ্যের ঐক্য ও অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। তিনি দীর্ঘ দশ বছর দুর্ধর্ষ মারাঠা হানাদারদের বিরুদ্ধে অক্লান্ত সংগ্রাম করে এদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে বাংলার ধন-প্রাণ রক্ষা করেন।

 

৪. দক্ষ কূটনীতিবিদ : আলীবর্দী খান একজন সুদক্ষ কূটনীতিবিদ ছিলেন। তিনি মারাঠাদের আক্রমণে পর্যুদস্ত বাংলার অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য ইংরেজ, ওলন্দাজ, ফরাসি বণিকদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করতেন। এছাড়া তার রাজত্বে কাসিম বাজার, ছাপড়া, পাটনা এব ঢাকায় স্থাপিত ইউরোপীয় কুঠি থেকে তিনি নিয়মিত নজরানা আদায় করতেন।

 

৫. জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক: তিনি নিজে শিক্ষিত ছিলেন এবং জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার আমলে বাংলায় ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়। হিন্দু পণ্ডিত ও গ্রন্থকারেরাও ফার্সির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আপসহীন আক্রমণ ও কৌশলের নীতি অবলম্বন করে নবাব আলীবর্দী যেভাবে মারাঠাদের হাত থেকে বাংলার সুশাসনকে রক্ষা করেছেন তা অনুকরণীয়।