বাংলার নবাবি আমল পর্যালোচনা কর।
উত্তর :
ভূমিকা: সুবাদার মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকে বাংলায় নবাবি আমলের সূচনা হয়। তিনি ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ফররুখ শিয়ারের রাজত্বকালে বাংলার নবাব নিযুক্ত হন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তিনি প্রায় স্বাধীন সুবাদার হিসেবে বাংলার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এজন্য মুর্শিদকুলী খানকে বাংলার স্বাধীন নবাব বলা হয়ে থাকে।
বাংলার নবাবি আমল নিম্নে বাংলার নবাবি আমল আলোচনা করা হলো:
১. সুজাউদ্দিন খান : মুর্শিদকুলী খানের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তাই জামাতা সুজাউদ্দিনকে তিনি তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। মুর্শিদকুলী খানের মৃত্যুর পর তিনি বাংলা ও উড়িষ্যার নবাব হন। তিনি সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের প্রতি অনুগ্রহ ও বদান্যতা প্রদর্শন করে প্রশাসনে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করেন। ফলে তার সময় সমগ্র দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত ছিল।
২. সরফরাজ খান : সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সরফরাজ খান বাংলার মসনদে বসেন। তিনি দুর্বল ও অযোগ্য শাসক ছিলেন। ফলে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং তার পতন ঘটে।
৩. আলীবর্দী খান: সরফরাজ খানের অযোগ্যতার সুযোগে তাকে পরাজিত করে ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খান বাংলার মসনদে বসেন। তিনি একজন যোগ্য শাসক ও দক্ষ কূটনীতিবিদ ছিলেন। তিনি মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহকে প্রচুর অর্থ ও উপঢৌকন দিয়ে বাংলার শাসনকর্তা পদে ফরমান লাভ করেন। অতঃপর তিনি শাসনকার্যে মন দেন এবং স্বাধীন নবাব হিসেবে রাজত্ব করতে থাকেন।
৪. সিরাজউদ্দৌলা: আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলার নবাবি শার্সনের অবসান ঘটায়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, নবাবি আমল ছিল বাংলার ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নবাবি শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এদেশের সকল কর্তৃত্ব চলে যায় ইংরেজদের হাতে।