প্রাদেশিক সরকার কাকে বলে?

প্রাদেশিক সরকার

গভর্নর: প্রদেশের শাসনভার অর্পণ করা হয়েছে গভর্নরের উপর। প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে গভর্নর প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্টের নির্দেশে প্রেসিডেন্টের অনুকূলে কার্যসম্পাদন করতেন। তার এ কাজে তাকে একটি প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা সহায়তা করতো। গভর্নর প্রাদেশিক পরিষদের মধ্য থেকে পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করতেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করতেন। গভর্নর প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, মুলতবি অথবা ভেঙে দিতে পারতেন। তার অনুমোদন ছাড়া কোন বিল আইনে পরিণত হতে পারত না। তিনি এডভোকেট জেনারেল এবং প্রাদেশিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন-এর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রিসভা: গভর্নর তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করতেন। মুখ্যমন্ত্রী তার সহযোগী মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করতেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রাদেশিক পরিষদের নেতার মর্যাদাও লাভ করতেন। প্রাদেশিক শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সর্বময় কর্তৃত্ব ছিল। মন্ত্রিসভা গভর্নরের অনুকূলে কার্য পরিচালনা করতেন। মন্ত্রিসভা প্রাদেশিক পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রতিনিধিত্ব করতো। পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভারও পতন ঘটত।

 

 

 

প্রাদেশিক আইনসভা: ১৯৫৬ সালের সংবিধানে প্রত্যেক প্রাদেশিক আইনসভায় বা প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ সদস্যের সমন্বয়ে এক কক্ষ বিশিষ্ট পরিষদের ব্যবস্থা ছিল। পাশাপাশি ১০ বছর পর্যন্ত ১০টি আসন মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালের সংবিধানে প্রত্যেক প্রদেশের পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৫৫ এ নামিয়ে আনা হয়, যার মধ্যে ৫টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রাদেশিক পরিষদের মেয়াদকাল ছিল ৫ বছর। পরিষদ সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করতেন। প্রাদেশিক গভর্নর প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। পরিষদ কৃর্তক গৃহীত প্রতিটি বিল সম্মতির জন্য গভর্নরের নিকট প্রেরিত হতো। প্রাদেশিক সরকারের আয় ব্যয় মঞ্জুর ও করধার্য করাও প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম কাজ ছিল। এছাড়া প্রদেশের বার্ষিক বাজেট পরিষদে পেশ করা হয়। তবে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে আনার মতো তেমন কোন ক্ষমতা পরিষদের ছিল না।

 

প্রাদেশিক প্রশাসনিক কাঠামো কেন্দ্রীয় সচিবালয় ছিল যেমন সমগ্র দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু, তেমনি প্রাদেশিক সচিবালয় ছিল প্রাদেশিক প্রশাসনের মূল কেন্দ্র। প্রাদেশিক সচিবালয়েরও শীর্ষে ছিলেন প্রাদেশিক মন্ত্রী। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন সচিব। কেন্দ্রের মতো প্রাদেশিক মন্ত্রণালয়ও কয়েকটি বিভাগ, ডিভিশন ও শাখায় বিভক্ত ছিল। প্রাদেশিক সচিবালয়ে একজন মুখ্য সচিব ছিলেন, যিনি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সমন্বয়, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ করতেন। সর্ব প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রদেশ কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ৪টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ১২টি বিভাগ ছিল। প্রতিটি বিভাগ আবার কয়েকটি জেলায় বিভক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৪৫টি জেলা ছিল। বিভাগের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল বিভাগীয় কমিশনারের উপর। অন্যদিকে, জেলার দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি কমিশনার। জেলার অধীনে কতকগুলো মহকুমা এবং মহকুমার অধীনে কতকগুলো থানা ছিল। মহাকুমার প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন মহকুমা প্রশাসক এবং থানার প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন)।