কেন্দ্রীয় সরকার
প্রেসিডেন্ট: ১৯৫৬ সালের সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রধান প্রেসিডেন্ট নামে অভিহিত হন। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচনী সংস্থার (Electoral College) মাধ্যমে তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হতে হতো এবং কেহ দশ বছরের বেশি অর্থাৎ দুই বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবে না। শাসনতন্ত্র লংঘন বা অসদাচারণের দায়ে প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করা যেত। কিন্তু ১৯৬২ সালের সংবিধানে বলা হয়, এক লক্ষ বিশ হাজার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচক মণ্ডলীর (Electoral College) দ্বারা পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এছাড়া তাঁর কার্যকালের মধ্যে শুধু অভিশংসনের (Impeachment) দ্বারাই তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করা যাবে।
প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীরও সর্বাধিনায়ক ছিলেন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশের গভর্নর, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ এবং এটর্নী জেনারেল নিযুক্ত করেন। প্রেসিডেন্টের অনুকূলে থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যনির্বাহ করতেন। অন্যান্য মন্ত্রিগণও তার দ্বারা নিযুক্ত বা পদচ্যুত হতেন। প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের সভা আহ্বান, মুলতবি অথবা ভেঙে দিতে পারতেন। কোন অর্থবিল তার পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে পরিষদে উত্থাপন করা যেত না। প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা পোষণ করলে প্রদত্ত কোন সাজা হ্রাস বা মওকুফ করতে পারতেন।
মন্ত্রিপরিষদ: জাতীয় পরিষদ সদস্যদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হতেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিযুক্ত ও পদচ্যুত করতেন। মন্ত্রিগণ জাতীয় পরিষদের নিকট দায়বদ্ধ ছিলেন। তবে ১৯৬২ সালের সংবিধানে এ ব্যবস্থা রাখা হয় যে, জাতীয় পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদসমূহের কোন সদস্য প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভার সদস্য নিযুক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার পরিষদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। মন্ত্রিগণ প্রেসিডেন্টের সন্তুষ্টি পর্যন্ত দায়িত্বভার পালন করতেন। সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রী না হওয়ার কারণে মন্ত্রিদের পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বমূলক কোন ভূমিকা ছিল না।
কেন্দ্রীয় আইনসভা: পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভা প্রেসিডেন্ট ও এককক্ষবিশিষ্ট একটি পরিষদ নিয়ে গঠিত যা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নামে পরিচিত। প্রথম দিকে ৩০০ সদস্য নিয়ে জাতীয় পরিষদ গঠিত ছিল এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমসংখ্যক সদস্য গৃহীত হতো। পরবর্তীকালে এর মোট সদস্য সংখ্যা ১৫৬ তে আনা হয়। উভয় প্রদেশ হতে সমান সদস্য নিয়ে। এছাড়া উভয় প্রদেশ হতে ৩টি করে মোট ৬টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কমপক্ষে ২৫ বছর বয়স্ক পাকিস্তানের যে কোন নাগরিক জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হতে পারতেন। তবে কোন ব্যক্তি একই সাথে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হতে পারতেন না। জাতীয় পরিষদের কোন কার্যবিবরণীর বৈধতা সম্পর্কে আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যেত না।
সুপ্রিম কোর্ট: পাকিস্তানের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত প্রধান
বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণদের নিয়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হয়। প্রেসেডেন্ট কর্তৃক প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং তার সাথে পরামর্শক্রমে অন্যান্য বিচারপতি নিযুক্ত হন। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতিগণ দায়িত্বে নিযুক্ত থাকতে পারতেন। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে সুপ্রিম কোর্ট তা মীমাংসার এখতিয়ার রাখে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়, আদেশ বা শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কাঠামো: ব্রিটিশ ভারতের মতো পাকিস্তানেও সচিবালয় ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি কার্যক্রমের স্নায়ুকেন্দ্র। সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত ছিল কতকগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরিদপ্তর, সরজমিনে প্রশাসন পরিচালনার জন্য বিভাগ, জেলা ও মহকুমা। নীতিনির্ধারণ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভাগ ও পরিদপ্তরগুলো নীতি বাস্তবায়নে কার্যক্রম গ্রহণ করতো। পাকিস্তানে কয়েকটি নতুন নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। যেমন- জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ, পরিকল্পনা কমিশন ইত্যাদি। নীতিনির্ধারণী বা মাঠ প্রশাসন পরিচালনার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ একক ছিল সিএসপি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে। মন্ত্রণালয়ের মধ্যমণি ছিলেন মন্ত্রী। মন্ত্রী ছিলেন মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক প্রধান। মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী ও প্রশাসনিক প্রধান থাকতেন সচিব। মন্ত্রণালয়ের পরেই ছিল ডিভিশন, যার প্রধান ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব বা একজন যুগ্ম সচিব। প্রত্যেক ডিভিশন আবার কয়েকটি শাখায় বিভক্ত ছিল। শাখার দায়িত্বে ছিলেন উপ-সচিবগণ। উপ-সচিবের অধীনে সহকারী সচিব, সহকারী সচিবই ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।