কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার সম্পর্ক
১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালের সংবিধানে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার সম্পর্ক, এখতিয়ার, ক্ষমতা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। কোন কোন বিষয়ে প্রদেশকে কেন্দ্রের অধীনে বা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। প্রথমত, জাতীয় স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলো কেন্দ্রের উপর এবং অবশিষ্ট বিষয়সমূহ প্রদেশের উপর অর্পণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কোন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কেন্দ্রের আইনটি গৃহীত হয় এবং প্রদেশের আইন অসংগতির অজুহাতে বাতিল করা হয়। তবে প্রাদেশিক আইনটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ করলে, তা ঐ প্রদেশের জন্য বলবৎ থাকত। তৃতীয়ত, শাসনতান্ত্রিক বিপর্যয়ে কিংবা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারত। এছাড়া কোন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদনের বা সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারত। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারকে যে কোন ক্ষমতা বা কার্যভার অর্পণ করতে পারত। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়া প্রাদেশিক সরকার দেশের বাহির হতে কোন ঋণ গ্রহণ করতে পারত না। পঞ্চমত, গভর্নর প্রাদেশিক শাসন বিভাগ ও প্রাদেশিক পরিষদে পর্যাপ্ত ক্ষমতা লাভ করলেও তার কার্যাবলির জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের নিকট দায়ী থাকেন। ষষ্ঠত, প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে প্রাদেশিক শাসন বিভাগের সকল বিষয়ে প্রভৃত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং প্রাদেশিক পরিষদকে প্রাদেশিক বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সপ্তমত, প্রাদেশিক আইনের দ্বারা কর আরোপ করা যেত, তবে তা জাতীয় পরিষদের কোন আইনের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারত না। অষ্টমত, কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের সমগ্র সামুদ্রিক এলাকার তলদেশে অবস্থিত সকল জমি, খনিজ দ্রব্যাদি ও অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে। নবমত, প্রেসিডেন্ট কর্তৃক গঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ দুই প্রদেশ ও প্রদেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার প্রকল্প প্রণয়ন করে এবং বৈদেশিক আয়সহ রাষ্ট্রের সকল সম্পদ বণ্টনের বিষয়ে বৈষম্য দূরীকরণের প্রকল্প গ্রহণ করে।
আঙ্গিক বিচারে পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয়। কিন্তু এতে প্রদেশের উপর কেন্দ্রের অধিকতর আধিপত্য বজায় ছিল। গভর্নর অর্থাৎ প্রদেশের শীর্ষ ব্যক্তি প্রাদেশিক শাসন বিভাগ ও প্রাদেশিক পরিষদে পর্যাপ্ত ক্ষমতা লাভ করলেও তাঁর কার্যাবলির জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের নিকট দায়ী থাকেন। ফলে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও প্রদেশে দায়িত্বশীল সরকার গঠন বিঘ্নিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তাই বলা যায় যে, সংবিধানে প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হলেও তা পূর্ণাঙ্গরূপে দেয়া হয় নি।