১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারাসমূহ

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারাসমূহ

১.আইন দ্বারা ভারতবর্ষকে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি ডোমিনিয়নে বিভক্ত করা হবে। সিলেটসহ পূর্ববাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান এবং অবশিষ্ট ভারতবর্ষ নিয়ে ভারত ডোমিনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে। দেশীয় রাজ্যগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে যে, তারা স্বাধীন থাকবে না কোন ডোমিনিয়নে যোগ দিবে।

২. এর ফলে ডোমিনিয়ন দুটির উপর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোন আইনের কার্যকারিতা থাকবে না।

 

৩. প্রত্যেক ডোমিনিয়নে ব্রিটিশ সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত একজন গভর্নর জেনারেল থাকবেন।

 

৪. উভয় ডোমিনিয়ন তার নিজ আইনসভা গঠন করে স্ব-স্ব ডোমিনিয়নের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার লাভ করবে।

 

৫. নতুন সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ডোমিনিয়নের গণপরিষদ উক্ত ডোমিনিয়নের আইনসভারূপে কাজ করবে।

 

৬. নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ডোমিনিয়নের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুসারে পরিচালিত হবে।

 

৭. ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন গ্রহণ বা সংশোধনের ক্ষমতা ভোগ করবেন। এ সময়ের পর এ ক্ষমতা ভোগ করতে থাকবে গণপরিষদ।

 

৮. ভারত সচিবের স্থলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি ডোমিনিয়ন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

 

৯. সকল সরকারি কর্মচারী ও সামরিক বাহিনীকে ডোমিনিয়ন দুটির মধ্যে ভাগ করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি সত্যই অপরিহার্য ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইংরেজরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের অব্যাহত আন্দোলন চলতে থাকে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক কারণে এখানে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ততর হতে হতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়ও রূপ নেয়। এ থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতায় ইংরেজদের শাসনব্যবস্থাও ক্রমান্বয়ে অচল হয়ে পড়তে থাকে। এর পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে উপনিবেশসমূহে স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ভারতে ইংরেজ সৈন্য ও কর্মচারীদের দুর্বিসহ জীবন ব্রিটিশ সরকারকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারত ত্যাগের বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশের দুটি প্রধান জাতির সম্পর্কের বিপরীতমুখী অবস্থান দূর করে এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে যে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির উদ্যোগ নেয় তা ছিল নিঃসন্দেহে এক বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।