সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব
আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Bureaucracy এসেছে ফরাসি শব্দ Bureau থেকে যার অর্থ লেখার টেবিল বা ডেস্ক বা দপ্তর। তাই শাব্দিক অর্থে আমলাতন্ত্র বলতে দপ্তরভিত্তিক সরকারকে বুঝায়। Encyclopaedia Brittanica এর মতে, আমলাতন্ত্র বলতে ব্যুরো বা বিভাগগুলোতে প্রশাসনিক ক্ষমতার সম্পৃক্ততা বা কেন্দ্রীকরণ এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়সমূহে সরকারি কর্মচারীদের গর্হিত অন্যায় হস্তক্ষেপকে বুঝায়। যদিও ইউরোপে আমলাতন্ত্র বলতে স্থায়ী সরকারি কর্মচারিগণকে বুঝানো হয় এবং আমলা বলতে জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও দায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তি বিশেষকে চিহ্নিত করা হয়। John A. Veig এর মতে, “কোন সংগঠন তার কার্যক্রম পরিচালনা ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যে কর্মচারীবৃন্দ, কাঠামো ও পদ্ধতিকে অনুসরণ করে, তার সার্বিক বিষয়ই হচ্ছে আমলাতন্ত্র।” অধ্যাপক ফাইনারের মতে, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি স্থায়ী বেতনভুক ও দক্ষ চাকরিজীবি শ্রেণি।” অধ্যাপক গার্নারের মতে, “যথাযথভাবে আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে সরকার মূলত সরকারি দপ্তরের সহকারীবৃন্দ কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং যেখানে এসব দপ্তরের বিভাগীয় প্রধানদের দ্বারা সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ স্থিরিকৃত এবং মূলনীতিসমূহ নির্ধারিত হয়।” আমলাতন্ত্রের ভালো এবং মন্দ উভয় দিকই আছে। এ ব্যবস্থায় যেমন কার্যদায়িত্ব এবং ব্যক্তিবর্গের পদ্ধতিভিত্তিক সংগঠন যা সর্বাধিক কার্যকরীভাবে সমষ্টিগত প্রয়াসের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে, তেমনি আবার এ ব্যবস্থা সরকারি কর্মচারীদেরকে অতিরিক্ত ক্ষমতা অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ ক্ষমতার চরম অপব্যবহারও করতে পারে। পাকিস্তান আমলে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।