স্বদেশি আন্দোলন
হিন্দু সম্প্রদায় প্রভাবিত কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ প্রথম থেকে নানাভাবে বঙ্গ ভঙ্গ রদের প্রচেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বদেশি আন্দোলনের আদর্শকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এ আদর্শ অনুসারে তারা ব্রিটিশ দ্রব্য বর্জন, বিদেশি রীতিনীতি পরিহার এবং স্বদেশি পণ্য ব্যবহার করে ও দেশীয় সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হতে জনগণকে আহ্বান করে। ১৯০৫-০৬ সালে বাংলায় যে বর্জন আন্দোলনের বীজ রোপিত হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলনরূপে বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়। এ আন্দোলনের ঢেউ সমাজ, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনেও প্রভাবিত হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ সময় তার বিখ্যাত “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”- গানটি রচনা করেন। স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে বস্তুত ছাত্র, যুবক শ্রেণি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের পতন ঘটানো। বিপ্লবীরা সমগ্র দেশে বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে থাকল। এ সময় নানা ধরনের গুপ্ত সমিতিও প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে কলকাতার ‘যুগান্তর’ এবং ঢাকার ‘অনুশীলন সমিতি’ উল্লেখযোগ্য ছিল। ১৯০৮ সালে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল চাকী এ আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দান করেন। এ আন্দোলন প্রধানত হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত এবং বঙ্গ ভঙ্গ রদই এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলেও কিছু কিছু মুসলমান যুবক এ আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে হিন্দু দেবী কালীর নামে শপথ গ্রহণ এবং ‘বন্দে মাতরম’ সংগীত চালু করা হলে মুসলমানদের উৎসাহে ভাটা পড়ে এবং এ আন্দোলন হিন্দু আন্দোলনে পর্যবসিত হয়।