স্বাধীন ইস্টার্ন পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন ইস্টার্ন পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, চলাকালে ১৯৪২ সালে প্রাচ্যে জাপানিদের অব্যাহত অগ্রগতির কারণে ব্রিটিশ বাহিনীর ক্রমাগত ভাগ্যবিপর্যয় ঘটতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার ভারতের এ সংকটময় মুহূর্তে এখানকার রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতে প্রেরণ করেন। কিন্তু ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবে যুদ্ধ শেষে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের নেতারা এটা প্রত্যাখান করে। কংগ্রেস ‘অখণ্ড ভারত’ নীতিতে অটল থাকল, অন্যদিকে মুসলিম লীগ জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান দাবিতে কোন প্রকার আপোষ করতে অস্বীকার করে। এ পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অন্যতম কর্ণধার এবং উদারপন্থি নেতা রাজা গোপাল আচারীর উদ্যোগে ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেশ কয়েকদিন ধরে জিন্নাহ ও গান্ধির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন কেমন হবে তা নির্ধারণের জন্য একাধিক পরিকল্পনা যাচাই করার পর ‘স্বাধীন ইস্টার্ন পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের এক বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা জিন্নাহর কাছে প্রেরণ করে। এ পরিকল্পনায় লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ প্রতিষ্ঠার যে ইঙ্গিত দেয়া হয়, সে চেতনাও কাজ করেছিল। মূলত এটাই ছিল অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ, যা কখনো ‘ইস্টার্ন পাকিস্তান’, কখনো ‘বঙ্গাসাম’ (বঙ্গ ও আসাম মিলে), কখনো ‘বৃহত্তর বাংলা’ অথবা কখনো ‘স্বাধীন অখণ্ড বাংলা’ নামে পরিগণিত হয়েছিল।