লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন
এরূপ উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রাক্কালে ১৯৩৩ সালে মুসলিম লীগের এলাহাবাদ অধিবেশনে কবি আল্লামা ইকবাল মুসলমানদের জন্য পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, কাশ্মীর ও বেলুচিস্তান নিয়ে একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এরপর ১৯৩৭ সালে লীগের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে এ.কে. ফজলুল হক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে ও এটা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে মুসলিম সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে ফজলুল হক বিখ্যাত ‘লাহোর প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। চৌধুরী খালেকুজ্জামান এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। অধিবেশনে তা বিপুল ভোটে পাস হয়। এতে বলা হয়, “মুসলিম লীগের এ অধিবেশনের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, কোন সাংবিধানিক পরিকল্পনাই এ দেশে
কার্যকর হবে না বা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি না তা এরূপ মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।” মূলনীতি বা লাহোর প্রস্তাবের ধারাগুলো হচ্ছে-
১. ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী পাশাপাশি অবস্থিত এলাকাগুলোকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
২. প্রয়োজনে এ অঞ্চলগুলোর সীমানা এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যাতে করে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৩. এসব স্বাধীন অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম।
৪. এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার এবং স্বার্থরক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে কার্যকর পদক্ষেপ থাকতে হবে
৫. ভারতের যেখানে মুসলমানগণ সংখ্যালঘু সেখানেও শাসনতন্ত্রের অনুরূপ বিধানের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অধিকারগুলো রক্ষা করতে হবে। বাংলার কৃতি সন্তান এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাব মুসলিম ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রাখে। এ প্রস্তাবই মুসলিম লীগকে নতুন আশায় উজ্জীবিত এবং একটি নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্রমশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করে। প্রকৃতপক্ষে, লাহোর প্রস্তাবের ফলেই ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের পরিসমাপ্তির ভিত্তি প্রস্তর রচিত হয়।