ভারতবর্ষে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা
অ্যালান অক্টেভিয়ান হিউম (A. O. Hume) নামক জনৈক ভারত দরদি অবসর প্রাপ্ত ব্রিটিশ সিভিলিয়ান শাসক ও শাসিতের মধ্যকার সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি দূর করার জন্য, ভারতীয়দের নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সাধনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ন্যায়সঙ্গত দাবি উত্থাপনের লক্ষ্যে ভারতীয়দের জন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন এ উদ্যোগকে সমর্থন জানালে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে হিউম কয়েকজন বিশিষ্ট ভারতবাসীর সহায়তায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর মনে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বিরাজ করছিল, তা নিরসনের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমে ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের মতামত অবহিত হয়ে ব্রিটিশ শাসনের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার প্রয়াস নেন। বাঙালি ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র ব্যানার্জির সভাপতিত্বে মুম্বাইয়ে এ সংগঠনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজী, গোপালকৃষ্ণ, বদরউদ্দিন তৈয়াবজী প্রমুখ ছিলেন কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ। প্রথম দিকে এ সংগঠনের আদর্শ ছিল ইংরেজ সরকারের প্রতি অনুগত থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করা। এর জন্মও হয়েছিল একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান রূপে। কিন্তু পরবর্তীকালে এতে চরমপন্থিদের অনুপ্রবেশ ঘটলে সংগঠনটি চরম নীতি গ্রহণ করে। বিপিন চন্দ্র পাল, মতিলাল ঘোষ, লালা লাজপৎত্রাও প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা করতে থাকলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে মুসলমানরা কংগ্রেস থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে থাকে। সৈয়দ আহমদ প্রমুখ মুসলমান নেতৃবৃন্দ কংগ্রেসকে মুসলিম স্বার্থ-বিরোধী বলে মনে করতেন। তাঁদের মতে, শিক্ষা এবং আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য কংগ্রেসে যোগদান করা হবে আত্মঘাতীমূলক। মূলত কতিপয় চরমপন্থি হিন্দু নেতাদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে সংগঠনটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানরূপে দাঁড়িয়ে না থেকে হিন্দু-মুসলিম বিভেদকে বরং ত্বরান্বিত করে।