বঙ্গ ভঙ্গ রদ
স্বদেশি আন্দোলন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে পরিণত হলেও ব্রিটিশ সরকার প্রথম দিকে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং কঠোর হস্তে এ আন্দোলন দমন করতে থাকলে এ আন্দোলন ক্রমশ ক্ষীণবল হয়ে পড়ে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এ রকম পরিস্থিতিতে ১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ ও রাণী মেরী ভারতে আগমন করেন। এ সময় ভারতবাসীর আনুগত্যে খুশি হয়ে পঞ্চম জর্জ দিল্লির দরবারে হঠাৎ করে বঙ্গ ভঙ্গ রদের ঘোষণা দেন। ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে মুসলমানদেরও কিঞ্চিত সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হলো। কারণ এক সময় দিল্লি ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী। পূর্ব বাংলাকে আবার কলকাতার প্রশাসনে আনা হলো। সমগ্র বাংলাকে নিয়ে গভর্নরের অধীনে নতুন প্রদেশ (Presidency) সৃষ্টি হলো। নতুন এ ব্যবস্থাটি ১৯১২ সালের জানুয়ারি হতে কার্যকর করা হলো:
ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িকতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাতে একটি প্রস্তরফলক হিসেবে কাজ করে ১৯৪০, সালের লাহোর প্রস্তাব। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ১৯৩৭ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রাদেশিক ক্ষমতা নিয়ে হিন্দু প্রভাবিত কংগ্রেস এবং মুসলমানদের মুসলিম লীগের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এরই পরিণতিতে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ-১৯৩৯ সালে তাঁর দ্বিজাতি তত্ত্ব (Two Nation Theory) ঘোষণা করেন। মুসলিম লীগের এ নেতার মতে, ধর্ম, সমাজ, কৃষ্টি সবকিছুতেই হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি। সুতরাং তাদের আবাসভূমিও ভিন্ন হওয়া উচিত। ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় কংগ্রেস নেতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু স্বীকার করেন, রাজনৈতিক দিক থেকে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে কোন সাধারণ সমঝোতা নেই এবং উভয়ের উদ্দেশ্যও সম্পূর্ণ আলাদা। এ অবস্থায় মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণার্থে এবং ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক পৃথক রাষ্ট্র (Seperate States) গঠনের প্রস্তাব করেন বাংলার অদ্বিতীয় জনপ্রিয় নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শের-এ বাংলা এ.কে. ফজলুল হক কর্তৃক এ প্রস্তাব দেয়া হয় বলে একে ‘লাহোর প্রস্তাব’ বলা হয়। তবে এ প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল আরো পূর্ব থেকে