খিলাফত আন্দোলন
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক স্বীয় স্বার্থে জার্মানির পক্ষ নিয়ে মিত্রশক্তির (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া) বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তুরস্কে বিদ্যমান খিলাফতের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের গভীর শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তারা ব্রিটেনকে সাহায্য প্রদান করে এই শর্তে যে, যুদ্ধ শেষে ভারতবাসীকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে এবং তুর্কি খিলাফতের কোন ক্ষতি করা হবে না। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ব্রিটেন এ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বিশাল তুর্কি সাম্রাজ্যকে খণ্ড-বিখণ্ড করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। এর প্রতিবাদে ১৯২০ সালে মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী এ দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় মুসলমানগণ তুরস্কের খিলাফতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ‘খিলাফত আন্দোলন’ এর সূত্রপাত ঘটান। খিলাফত নেতারা ব্রিটিশ দ্রব্য ও পদবি বর্জন, আইনসভার সদস্যপদ ত্যাগ ও সরকারের সাথে অসহযোগ নীতি, এমনকি স্বাধীনতা অর্জনের ডাকও দেন। এ সময় মহাত্মা গান্ধী ছিলেন কংগ্রেসের কর্ণধার। তিনি খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে একই সাথে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তুরস্কে মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয় এবং তিনি ১৯২৩ সালে লোজান সন্ধির মাধ্যমে তুরস্কের হৃত গৌরব অনেকটাই পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন। ১৯২৪ সালে তিনি সুদীর্ঘকালের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতীক ‘খিলাফতের’ অবসান ঘোষণা করলে খিলাফত আন্দোলনের অবসান ঘটে। তবে আপাতঃদৃষ্টিতে খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এ আন্দোলনই রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিল।