আব্দুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলীর অবদান
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহিবিদ্রোহে পরাজয়ের ফলে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। এরপর তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা তাদের জন্য অপরিহার্য। এ উপলব্ধিকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশেষ বাণী ও বাস্তব কর্মপন্থা নিয়ে এগিয়ে আসেন বাংলার দুই কৃতি সন্তান নওয়াব আব্দুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলী। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী আব্দুল লতিফ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। তার প্রচেষ্টায় কলকাতা মাদ্রাসায় এ্যাংলো-পারসিয়ান বিভাগ খোলা হয়। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ (Mohammedan literary society) প্রতিষ্ঠা। বাংলার মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারে এ প্রতিষ্ঠান বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আব্দুল লতিফের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতায় শিক্ষা কাউন্সিলের সভাপতি বেথুন সাহেব হিন্দু কলেজকে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তর করেন। এ ছাড়া আব্দুল লতিফের প্রচেষ্টায় ১৮৭২ সালে হুগলি কলেজ থেকে ‘দানবীর হাজী মুহাম্মদ মোহসীন তহবিল’ এর অর্থ সর্বশ্রেণির মুসলমানদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করার ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস ও উপমহাদেশের বিভক্তি, ১৯৪৭ ৬৭ আব্দুল লতিফের মতো আমীর আলীও মুসলমানদের পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কর্মজীবনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট, বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য, লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী আমীর আলী একজন প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের পক্ষে ছিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় Central National Mohammedan Association গঠন করেন। এ সমিতির মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ও ঐক্য স্থাপন এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্রিটিশ সরকারের নিকট ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া পেশ করেন। ১৯০৮ সালে তিনি লন্ডনে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনের সপক্ষে সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন।