রমজান শব্দের অর্থ ও মর্ম

 

 

 

রমজান শব্দের অর্থ ও মর্ম

ইসলামী বর্ষপুঞ্জির নবম মাসকে আল্লাহপাক “রমজান” নামে বিভ‚ষিত করেছেন। এই নামটি আল-কোরআনের দুই নম্বর সূরা আল বাকারার একশত পঁচাশি নম্বর আয়াতে মাত্র একবার এসেছে। আল-কোরআনের অন্য আরো একশত তেরটি সূরার কোথাও এই নামের উল্লেখ পাওয়া যায় না। কেন যায় না, কি জন্য যায় না, তার হাকীকত একমাত্র আল্লাহপাকই ভালো জানেন। তবে সসীম জ্ঞানের অধিকারী মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সত্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় যতটুকু নেয়ামত দান করেছেন, তার আলোকে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানীগণ রমজান শব্দের অর্থ ও মর্ম বিশ্লেষণে বহুদূর অগ্রসর হয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়।

 

আসুন এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক। (ক) আরবি রমজান শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছেÑ “রামাজা” এর অর্থ দহন, জ্বলন ও ছাই-ভস্মে পরিণত হওয়া। কেননা রোজা রাখার দরুন ক্ষুধা-পিপাসার তীব্র জ্বালায় রেজাদারের উদর জ্বলতে থাকে। এই দহন ও কষ্টকে বোঝাবার জন্য আরবি ভাষায় বলা হয়ে থাকে যে রোজাদার দগ্ধ হয়, ভস্মীভ‚ত হয়। ক্ষুধা-পিপাসার কী জ্বালা তা রোজাদার মর্মে মর্মে অনুভব করে বলেই রোজার মাসটির নাম রমজান রাখা হয়েছে।

 

(খ) আর রামাজা ধাতু হতে রামাজাউ শব্দটিও গঠিত হয়েছে। যার উত্তাপের তীব্রতা, জ্বলনের ক্ষিপ্রতা, অবস্থা অবস্থান ও পরিবেশের তাড়নায় রোজাদারের মধ্যে কখোনো কখোনো এই জ্বলন তীব্র রূপ ধারণ করে থাকে।

 

সহীহ বোখারী শরীফের হাদিসে উক্ত হয়েছে যে, সূর্যোদয়ের পর সূর্য কিরণের তাপে প্রাচীর যখন জ্বলে উঠে, তখনই আউয়্যাবিন নামাজ পড়ার সময়। বস্তুত : সূর্যের তাপের তীব্রতায় মানুষের মাথা হতে পা পর্যন্ত জ্বলন ধরিয়ে দেয়। সূর্য তাপ যতই তীব্র হয় জ্বলনের তীব্রতাও ততো বর্ধিত হতে থাকে। মোট কথা, পুরো রমজান মাসটাই হলো অব্যাহত জ্বলন ও তীব্র দহনের একত্র সমাহার।

 

(গ) আর এই মাসটির রমজান নামকরণের কারণ হলো এই যে, এই মাসে রোজাদারগণ যে সকল নেক আমল করে; তা তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার ও নিশ্চিহ্ন করে দেয়। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় যবানে পাকে এমন উক্তিই করেছেন।

(ঘ) কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই মাসটির নাম রমজান রাখার কারণ এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে, এই মাসে মুমিন মুসলমানদের হৃদয়-মন, ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, কামনা-বাসনা, নেক আমল করা, ওয়াজ-নসীহত শ্রবণ করাও পরকাল চিন্তায় বিভোর হওয়ার জন্য বিশেষভাবে উত্তাপ গ্রহণ করেও উদ্বেল হয়ে উঠে। যেমন সূর্যের প্রখর তাপে বালুকা রাশী ও প্রস্তরসমূহ উত্তপ্ত হয়ে থাকে।

(ঙ) একদল বিশেষজ্ঞ এই অভিমতও ব্যক্ত করেছেন যে, আরবি বারো মাসের নাম নির্ধারণকালে যে সময়টিতে সূর্যতাপ তীব্র হতে তীব্রতর হওয়ার দরুন দহন ও জ্বলন বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল, সে সময়টিরই নামকরণ করা হয়েছে রমজান মাস। তখনকার সময়ের জ্বলনও দহনের তীব্রতার সাথে রোজাদারদের ক্ষুধা পিপাসার জ্বলন ও দহনের পূর্ণমাত্রায় সামঞ্জস্য রয়েছে তা নিদ্বির্ধায় বলা যায়।

(চ) আল্লামা মাওয়ার্দী (রহ:) বলেছেন, প্রাক ইসলামী যুগে এই মাসটির নাম ছিল তাছাবুক অর্থাৎ পূর্বাহ্নে শাণিত করা। কেননা, অন্ধকার যুগে আরব জাতির লোকেরা রমজান মাসে আগেভাগে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও হাতিয়ার শাণিত ও ধার করে নিত। যেন শাওয়াল মাসে নির্বিঘেœ শত্রæর মোকাবেলা করতে পারে। কেননা যে মাসে যুদ্ধ করা হারাম তার পূর্ববর্তী মাস হলো শাওয়াল। আর ইহাই রমজানের পরবর্তী মাস। এ জন্যই রোজাদারের ত্যাগ, ধৈর্য ও আন্তরিকতা পূর্ণ নিয়্যতের আসাতে যাবতীয় শয়তানী প্ররোচনা ও কুটিল চক্রান্তের জাল জ্বলেপুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

(ছ) সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন: রমজান এমন একটি মাস যার প্রথম দশ দিন রহমতের বারিধারায় পরিপূর্ণ। দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা ও মার্জনার জন্য নির্ধারিত। শেষ দশ দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের উপায়রূপে নির্বাচিত। এ জন্যই রমজান নামে সন্নিবিষ্ট আরবী পাঁচটি বর্ণমালা যথা : রা, মীম, দোয়াদ, আলিফ এবং নুন-এর অন্তর প্রবাহে নূরে ইলাহীর প্রকাশস্থল মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর জ্যোতির্ময় আমলী জিন্দেহীর প্রভাব, অবিরাম কিরণ বর্ষণ করে বলেছে। যা কোনো দিন মøান হবার নয়। সুতরাং আমরা যেন রোজা পালনের মাধ্যমে দেহের ষড়রিপু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে পারি, সে তাওফিক আল্লাহপাক আমাদেরকে দান করুন, আমীন!