যে ব্যবস্থার সাহায্যে রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় তাকে বৈদ্যুতিক কোষ (cell) বলে। বিজ্ঞানী ভোল্টা (Volta) সর্বপ্রথম এই ধরণের কোষ আবিষ্কার করেন বলে তাঁর আবিষ্কৃত এই কোষকে সরল ভোল্টার কোষ বলে। মূলত সকল তড়িৎ কোষেই দুটি তড়িৎদ্বার (electrode) এর ব্যাবস্থা থাকে। এর একটিতে ধনাত্মক চার্জ এবং অপরটিতে ঋণাত্মক চার্জ জমা হয়।
ফলে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হয় যাকে ঐ কোষের তড়িচ্চালক বল বলে। একটি সরল ভোল্টার কোষে দস্তার পাত ও তামার পাতকে তড়িৎদ্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লঘু সালফিউরিক এসিড (dil.H2SO4) হলো এই কোষের একমাত্র রাসায়নিক পদার্থ। এর ফলে ঐ এসিডে নিমজ্জিত দস্তার পাতে এবং তামার পাতে যথাক্রমে ঋণাত্মক চার্জ ও ধনাত্মক চার্জ সঞ্চিত হয় এবং পাতদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এই কোষের তড়িচ্চালক বলের পরিমাণ প্রায় 1.08 Volt হয়।
অভ্যন্তরীণ রোধ (Internal Resistance)
যখন কোন তড়িৎ কোষ একটি বদ্ধ বর্তনীতে যুক্ত থাকে, তখন তড়িৎদ্বার দুটির মধ্যে বিভব পার্থক্যের কারণে ঐ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই তড়িৎ প্রবাহ কোষের বাইরে বহিঃবর্তনীতে যেমন প্রবাহিত হয় তেমনি কোষের অভ্যন্তরের রাসায়নিক পদার্থের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হয়। তবে কোষের অভ্যন্তরে তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ হয় কোষের ঋণাত্মক মেরু হতে ধনাত্মক মেরুর দিকে। তড়িৎ প্রবাহের সময় কোষের অভ্যন্তরের রাসায়নিক পদার্থ তড়িৎ প্রবাহে কিছু বাধা প্রদান করে। এই বাধাকে উক্ত কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ বলে। কোষের ভিতরকার রাসায়নিক পদার্থ, কোষের মেরুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব, মেরুদ্বয়ের আকার ইত্যাদির উপর কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ নির্ভর করে। মেরুদ্বয়ের আকার বড় এবং মেরুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম হলে কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ কম হয়।
তড়িচ্চালক বল (Electromotive Force)
একক পরিমাণ চার্জকে তড়িৎ কোষ সমেত বর্তনীর এক বিন্দু হতে সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে পুনরায় ঐ বিন্দুতে আনতে যে কাজ সম্পন্ন হয় অর্থাৎ তড়িৎ প্রবাহ চলমান রাখার জন্য তড়িৎ কোষ যে শক্তি সরবরাহ করে তাকে ঐ কোষের তড়িচ্চালক বল বলে। তড়িৎ কোষ মূলত বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ চলমান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এ কারণে তড়িচ্চালক বলকে তড়িচ্চালক শক্তিও বলা হয়। খোলা অবস্থায় একটি কোষের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যই হলো ঐ কোষের তড়িচ্চালক বল।