তরঙ্গ কাকে বলে? তরঙ্গ কত প্রকার ও কি কি? What is Wave?

 

 

 

 

 

 

 

 

তরঙ্গ কাকে বলে? (What is Wave called in Bengali/Bangla?)

যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চারিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ (Wave) বলে।

পুকুরের স্থির পানিতে ঢিল ফেলা হলে ঢিলটি পানি স্পর্শ করলে ঐ স্থানের পানির কণাগুলো আন্দোলিত হয়। এ কণাগুলো আবার পার্শ্ববর্তী স্থির পানির কণাগুলোকে আন্দোলিত করে। এভাবে কণা থেকে কণাতে স্থানান্তরিত আন্দোলন অবশেষে পুকুরের পাড়ে পৌঁছে। কিন্তু এই আন্দোলনের ফলে পানির কোনো কণাই তার সাম্যাবস্থান থেকে বেশি দূরে যায় না।

তরঙ্গের প্রকারভেদ (Types of wave)
তরঙ্গ দুই প্রকার। যথা– ১) অনুপ্রস্থ তরঙ্গ ২) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ : যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। পানির তরঙ্গ অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ।
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ : যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। বায়ু মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ।

তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of wave)
তরঙ্গ শক্তি সঞ্চালন করলেও মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থানান্তরিত করে না। তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও উপরিপাতন ঘটে এবং এর বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে তরঙ্গ সঞ্চালনে মাধ্যমের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন, যান্ত্রিক তরঙ্গ; তবে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গসমূহ সঞ্চালনে মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
তরঙ্গ সংক্রান্ত কয়েকটি সংজ্ঞাঃ
  •  পূর্ণ দোলন (Complete oscillation) : সরল ছন্দিত স্পন্দন সম্পন্ন কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে একই নিয়মে একটি নির্দিষ্ট পথে আবার ঐ বিন্দুতে ফিরে এলে তাকে পূর্ণ দোলন বলে।
  •  পর্যায়কাল (Time period) : পর্যাবৃত্ত গতি সম্পন্ন কোন বস্তুর একটি পূর্ণ কম্পন বা পর্যায় সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে পর্যায়কাল বলে।
  •  কম্পাঙ্ক (Frequency) : তরঙ্গস্থিত স্পন্দিত একটি বস্তু প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বলে।
  •  বিস্তার (Amplitude) : তরঙ্গস্থিত স্পন্দিত একটি বস্তু কণার সাম্যাবস্থান থেকে পরিমাপিত যেকোন এক দিকের সর্বাধিক সরণকে ঐ তরঙ্গের বিস্তার বলে।
  •  দশা (Phase) : তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কোনো কণার যেকোনো মুহূর্তের গতির সম্যক অবস্থানকে তার দশা বলে।
  •  আদি দশা (Epoch) : তরঙ্গস্থিত স্পন্দিত একটি বস্তুকণার সময় পরিমাপ শুরুর পূর্বের দশাকে তরঙ্গের আদি দশা বলে।
  •  তরঙ্গ বেগ (Wave Velocity) : নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ বেগ বলে।
  •  তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (Wave length) : তরঙ্গস্থিত স্পন্দিত একটি বস্তুকণা যে সময়ে একটি পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন করে সে সময়ে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে ঐ তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে।
  •  তরঙ্গমুখ (Wavefront) : তরঙ্গস্থিত সমদশাসম্পন্ন বস্তুকণাগুলো যে তলে অবস্থান করে তাকে তরঙ্গের তরঙ্গমুখ বলে।