ক) তরুক্ষীর টিস্যু (Laticiferous tissue)
যে টিস্যু থেকে তরুক্ষীর নিঃসৃত হয় তাদেরকে তরুক্ষীর টিস্যু বলা হয়। তরুক্ষীর দুধের মত একরকম সাদা, হলুদ অথবা বর্ণহীন আঠালাে তরল পদার্থ। তরুক্ষীরে শ্বেতসার, আমিষ, চর্বি, আঠা উৎসেচক ইত্যাদি থাকে। জিমনােস্পার্মের অনেক গােত্রে তরুক্ষীর পাওয়া যায়। তরুক্ষীর টিস্যু দুই রকমের যথা- i) তরুক্ষীর নালী ও ii) তরুক্ষীর কোষ।
- i) তরুক্ষীর নালী (Latex vessel) : লম্বালম্বি ভাবে সাজানাে কতকগুলি লম্বা লম্বা কোষের প্রাচীর গলে গিয়ে যে নালীর মত অঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে তরুক্ষীর নালী বলে। প্রাথমিক ভাজক টিস্যু থেকে এসব নালীর সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এসব নালী শাখান্বিত হয় এবং পাশাপাশি নালীর শাখাগুলি মিলিত হয় এবং এদের মধ্য প্রাচীর বিনষ্ট হওয়ার ফলে একরকম নালিকা জালের সৃষ্টি করে। এসব নালীতে তরুক্ষীর জমা থাকে। কচু, রাবার, কলা, পেপে উদ্ভিদে তরুক্ষীর নালী থাকে। রাবার গাছের তরুক্ষীর হতেই বানিজ্যিক রাবার তৈরি হয়।
- ii) তরুক্ষীর কোষ (Latex cells) : যেসব কোষ তরুক্ষীর ধারণ করে তাদের তরুক্ষীর কোষ বলে। এরা ভাজক টিস্যু থেকে উৎপন্ন একটি লম্বা কোষ দ্বারা গঠিত। এটি শাখান্বিত ও বহু নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট তবে এটা পাশাপাশি থাকলেও তরুক্ষীর নলের মত একে অপরের সাথে মিলে জালিকা সৃষ্টি করেনা। বট, কাঁঠাল, আকন্দ, করবী, ফনিমনসা, ছাতিম প্রভৃতি গাছে তরুক্ষীর কোষ থাকে।
খ) গ্রন্থি টিস্যু (Glandular Tissue)
এক বা একাধিক কোষের সমন্বয়ে গঠিত টিস্যু থেকে যখন কোন পদার্থ নিঃসৃত হয় তখন তাকে গ্রন্থি টিস্যু বলে। কোষগুলি সজীব। এদের কোষে সাধারণত কোন গহ্বর থাকেনা। এসব কোষ থেকে মধু, এনজাইম, রেজিন, ট্যানিন, গঁদ, মিউসিলেজ, তেল, পানি ইত্যাদি নিঃসৃত হয়। এসব নিঃসৃত পদার্থের নামানুসারে গ্রন্থিগুলি নামও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন—
i) রেজিন গ্রন্থি যথা- পাইন গাছের কান্ডে থাকে।
ii) ট্যানিন গ্রন্থি যথা- তেঁতুল ও বাবলা গাছের কান্ডে
iii) গদ গ্রন্থি যথা- সজিনা, বাবলা গাছের কান্ডে থাকে।
iv) মিউসিলেজ গ্রন্থি যথা- জবা ফুল ও পাতায়, পান পাতায় থাকে।
v) তৈল গ্রন্থি- লেবু, কমলালেবু, কামিনী পাতা, ফুল ও ফলে থাকে।
vi) মধু গ্রন্থি- বিভিন্ন গাছের ফুল থাকে।
vii) উৎসেচক নিঃস্রাবী গ্রন্থি- তামাক, ড্রসেরা, কলস উদ্ভিদ (পতঙ্গভূক) উদ্ভিদের পাতায় থাকে।
viii) পানি নিঃস্রাবী গ্রন্থি- কচুরীপানায় থাকে।
কাজঃ খাদ্য পরিবহন করা।