আমরা কথা বলার সময় মাঝে মাঝেই থামি। এতে নিশ্বাস যেমন নেওয়া হয় তেমনি কথার অর্থও পরিষ্কার হয়। কথার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝাতে থামার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাই বিরামচিহ্ন। বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়ের অন্যতম হলো বিরাম বা যতিচিহ্ন। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখলেই চলে না। অর্থবোধের জন্য বাক্যে এমন সব চিহ্ন ব্যবহার করা আবশ্যক– যাতে বক্তব্য বিষয় অনায়াসে বোঝা যায়।
তাই, কথা বলার সময় বাক্যের স্থানে স্থানে স্বল্প বিরামের জন্য যেসব চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়, সেগুলোকে বিরামচিহ্ন বলে।
বাংলা ভাষায় যতি বা বিরামচিহ্ন ১২টি এবং বাংলা ভাষায় যতি বা বিরাম চিহ্নের প্রচলন করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
বিরাম চিহ্নের গুরুত্ব
বিরামচিহ্নের গুরুত্ব অপরিসীম। বিরামচিহ্ন ছাড়া কোনো ব্যক্তব্যকে অনায়াসে বোঝা সম্ভব নয়। একটি উদাহরণের মাধ্যমে এর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়—
এখানে থাকবেন, না থাকলে বিপদ হবে।
এখানে থাকবেন না, থাকলে বিপদ হবে।
কমা/পাদচ্ছেদের ব্যবহারের তারতম্যে বাক্যের ভিন্ন অর্থ পরিদৃষ্ট হয়েছে। কাজেই, বক্তব্যের সহজবোধ্যতা বজায় রাখতে উপযুক্ত স্থানে বিরামচিহ্ন ব্যবহার আবশ্যক। অন্যথায়, মুখ্য উদ্দেশ্যের অপলাপ বা বিকৃতি ঘটবে। পরিশেষে বলা যায়, কোনো বক্তব্যকে সহজভাবে বোধগম্য ও মনোগ্রাহী করতে বিরামচিহ্নের ব্যবহার শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, অনস্বীকার্যও বটে।
বিরাম চিহ্নের ব্যবহার
দাঁড়ি (।) : যেখানে বাক্য শেষ হয় সেখানে দাঁড়ি (।) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন– সাদিয়া স্কুলে যায়।
কমা (,) : বাক্যে যেখানে খুব কম সময় থামতে হয়, সেখানে কমা (,) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন– মা, ভাত দাও।
সেমিকোলন (;) : যেখানে বাক্যের অর্ধেক শেষ হয় সেখানে সেমিকোলন (;) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন– রুনা ভাল; কিন্তু রিতা দুষ্ট।
কোলন (:) : কোনো বিষয়ের উদাহরণ বা ব্যাখ্যা দিতে কোলন (:) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন– ক্রিয়াপদ দুই প্রকার। যথা : সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন : কোনো প্রশ্ন বা কিছু জিজ্ঞাসা করা বুঝাতে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক (?) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ তোমার নাম কী?
বিস্ময়সূচক চিহ্ন : মনের আকস্মিক ভাব বুঝাতে বিস্ময়সূচক (!) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন : ফুল কি সুন্দর!
ড্যাস : কোনো বাক্যে ভাবের পরিবর্তন ঘটলে ড্যাস (–) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: সে কি মানুষ – পশু।
কোলন ড্যাস : উদাহরণ প্রয়োগের সময় কোলন ড্যাস (:-) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: বচন দুই প্রকার। যথা :- একবচন ও বহুবচন।
সংযোগ চিহ্ন : সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য সংযোগ ( – ) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন : ভালো-মন্দ, ভাই-বোন, বাড়ি-ঘর, মা-বাবা ইত্যাদি।
উদ্ধৃত চিহ্ন : বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তি বা অন্যের লেখা হুবহু প্রকাশ করতে উদ্ধৃতি (“ ”) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন : দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, “নিজেকে জান”।
লোপ চিহ্ন : কোনো শব্দকে সংক্ষিপ্ত করে লিখতে লোপ ( ’ ) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন : পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা’রা। (কা’রা = কাহারা)।
বন্ধনী চিহ্ন : কোনো কিছু আলাদা করে বুঝাতে বন্ধনী () {} [] চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন : সে (স্ত্রী) বাজারে যায়।
এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্নঃ–
- বিরাম চিহ্নের অপর নাম কি?
- বিরাম চিহ্ন কয়টি ও কি কি?
- বিরাম চিহ্নের প্রবর্তক কে?
- বিরাম চিহ্ন কেন ব্যবহৃত হয়?
- বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম কি?
- বিরাম চিহ্ন মনে রাখার কৌশল।
- সেমিকোলন কখন ব্যবহৃত হয়?
- প্রশ্নবোধক চিহ্ন কখন ব্যবহৃত হয়?
- ড্যাস কখন ব্যবহৃত হয়?
- দাঁড়ি কখন ব্যবহৃত হয়?