জৈব যৌগ কি? জৈব যৌগের শ্রেণিবিভাগ, নামকরণ এবং বিক্রিয়া। What is Organic compound?

 

 

 

 

 

 

 

What is meant by organic compounds in Bengali/Bangla?

জৈব যৌগ বলতে হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত হাইড্রোকার্বন এবং হাইড্রোকার্বন থেকে উদ্ভূত যৌগসমূহকে বোঝায়। এ সব জৈব যৌগে কার্বনের সাথে প্রধানত হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস, হ্যালোজেন প্রভৃতি মৌল যুক্ত থাকে। যেমন, মিথেন (CH4), মিথাইল ক্লোরাইড (CH3Cl), মিথাইল অ্যালকোহল (CH3OH), অ্যাসিটিক এসিড (CH3COOH) প্রভৃতি প্রত্যেকটি হলো জৈব যৌগ। জৈব যৌগে অবশ্যই কার্বন থাকে, কিন্তু কার্বন থাকলেই জৈব যৌগ নাও হতে পারে। যেমন– CO, CO2, কার্বনেট (Na2CO3), সায়ানাইড প্রভৃতি যৌগ কার্বনযুক্ত হলেও জৈব যৌগ নয়, এরা অজৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী– পোলার, অণুদ্বায়ী, পানিতে দ্রবনীয় এবং দহন অযোগ্য।

জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্য :

১. প্রত্যেক জৈব যৌগে কার্বন মৌল বর্তমান।

২. সাধারণত সমযোজী যৌগ।

৩. পানিতে সাধারণত অদ্রাব্য; তবে জৈব দ্রাবকে দ্রাব্য।

৪. একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন আণবিক গঠন বিশিষ্ট একাধিক যৌগের উপস্থিতি। অর্থাৎ সমাণুতা জৈব যৌগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

৫. জৈব যৌগ কার্বন পরমাণু নিজেদের মধ্যে একক দ্বি ও ত্রিবন্ধন গঠন করার পরও অন্যান্য মৌলের সাথে যুক্ত হতে পারে।

৬. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম।

জৈব যৌগের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Organic Compounds)
কার্বন পরমাণুর বিশেষ ধর্ম ক্যাটেনেশনের জন্য বহু সংখ্যক কার্বন পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার কার্বন শিকল ও বলয় গঠন করে এবং পরে কার্বনের চতুর্যোজ্যতা অনুসারে অন্য পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ সৃষ্টি করে থাকে। তাই কার্বন শিকলের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে জৈব যৌগসমূহকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন,

১. মুক্ত শিকল জৈব যৌগ (open chain organic compounds)
২. বদ্ধ শিকল বা বলায়কার জৈব যৌগ (closed chain or cyclic organic compounds)জৈব যৌগের নামকরণ (Nomenclature of Organic Compounds)

জৈব রসায়নের প্রথম দিকে প্রতিটি নতুন যৌগকে একটি স্বতন্ত্র নাম দেয়া হতো। সে সময় প্রাচীন রসায়নবিদগণ যৌগের নামকরণে উৎস, ধর্ম ইত্যাদির উপর নির্ভর করতেন। অধুনা অধিক সংখ্যক জৈব যৌগ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে উৎস কিংবা ধর্মভিত্তিক নামকরণ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই, জৈব যৌগের নামকরণে কয়েকটি বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসৃত হয়।

১. সাধারণ বা (Trivial) পদ্ধতি।

২. উদ্ভূত বা জাত পদ্ধতি (Derived System)।

৩. আন্তর্জাতিক বা আইউপ্যাক (IUPAC = International Union of Pure and Applied Chemistry) পদ্ধতি।

নিম্নে সাধারণ পদ্ধতি ও IUPAC পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।

 

১. সাধারণ বা ট্রিভিয়াল পদ্ধতি :

i. এই পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের নামের শেষে ‘এন’ (–ane) যুক্ত হয়।

ii. মিথেন থেকে বিউটেন পর্যন্ত চারটি যৌগের নাম এদের সমসংখ্যক কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট অ্যালকোহলের নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

iii. পঞ্চম থেকে উচ্চতর হাইড্রোকার্বনের ক্ষেত্রে অণুতে উপস্থিত কার্বন পরমাণুর সংখ্যাসূচক গ্রীক শব্দের শেষে ‘এন’ যুক্ত করে নামকরণ করা হয় : (Greek “penta” = five)। যেমন– পেন্টেন (Pentane), অকটেন (Octane) ইত্যাদি।

iv. কার্বন শিকলের গঠন সরল (normal) হলে নামের পূর্বে ‘n’ বসাতে হয়। যেমন– n-পেন্টেন।

v. যৌগের প্রান্তে তিনটি কার্বন সম্বলিত মূলক থাকলে নামের পূর্বে iso যোগ করতে হয়। যেমন- আইসোপেন্টেন (iso pentane)।

vi. যৌগের প্রান্তে চারটি কার্বন সম্বলিত মূলক থাকলে নামের পূর্বে tert যোগ করতে হয়।

 

জৈব যৌগের বিক্রিয়া (Reaction of Organic Compounds)

জৈব যৌগের বিক্রিয়াসমূহকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–

(i) যুত বিক্রিয়া (addition reaction);

(ii) প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (Substitution reaction);

(iii) অপসারণ বিক্রিয়া (Elemination reaction);

(iv) সমাণুকরণ বিক্রিয়া (Isomeric reaction);

এছাড়াও আরও কিছু বিক্রিয়া জৈব রসায়নে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়। যেমনঃ পানি বিশ্লেষণ (hydrolysis), জারণ (Oxidation), বিজারণ (Reduction)।