অগ্ন্যাশয় হলো মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের একটি গ্রন্থি। এটি একই সাথে বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে অগ্ন্যাশয় থেকে ট্রিপসিন, লাইপেজ ও অ্যামাইলেজ নামক উৎসেচক নিঃসৃত হয়। এসব এনজাইম শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। এছাড়া অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই দুটি হরমোন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোর পাশাপাশি অগ্ন্যাশয় দেহে অম্ল-ক্ষারের সমতা, পানির সমতা ও দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান
অগ্ন্যাশয় পাকস্থলির নিচে অবস্থিত এবং উদর গহ্বরের ডিওডেনামের অর্ধবৃত্তাকার কুন্ডলীর ফাঁক থেকে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত।
অগ্ন্যাশয়ের গঠন
অগ্ন্যাশয় ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৫ সেন্টিমিটার চওড়া একটি মিশ্র গ্রন্থি। এর চওড়া যে দিকটি ডিওডেনামের কুন্ডলির ফাঁকে থাকে তার নাম মাথা; যে অংশ সংকীর্ণ হয়ে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত সেটি লেজ; এবং মাথা ও লেজের মাঝের অংশকে দেহ বলে। অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিগুলাে থেকে ছােট ছােট নালিকা বেরিয়ে একত্রিত হয় এবং উইর্সাং নালি (duct of Wirsung) গঠন করে। এ নালি গ্রন্থির দৈর্ঘ্য বরাবর এসে ডিওডেনামের কাছে অভিন্ন পিত্তনালির সাথে মিলিত হয়ে ভ্যাটার এর অ্যাম্পুলার মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিকোষগুলো ছােট ছােট নালিকার প্রান্তে আঙ্গুরের গােহার মতাে সাজানো। এগুলোর বাইরে ক্ষুদ্র বহুভুজাকার কোষ একত্রিত হয়ে একেকটি আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যালস ( islets of Langerhans) গঠন করে। এগুলাে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমােন ক্ষরিত হয়। দেহের শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে এসব হরমােন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।