সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? সমাসের প্রয়োজনীয়তা কি?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা তার অধিক পদ মিলিত হয়ে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাাস বলে। যেমনঃ পিতা ও মাতা = পিতামাতা, বিলাত হতে ফেরত = বিলাত ফেরত ইত্যাদি।

সমাস সম্পর্কিত আরো সংজ্ঞা

১. সমস্যমান পদ – যে যে পদে সমাস হয় তাদের প্রত্যেককে সমস্যমান পদ বলে।

২. সমস্তপদ – সমাসবদ্ধ করলে যে পদ পাওয়া যায়, তাকে সমস্তপদ বলে।

৩. ব্যাসবাক্য – সমাসবদ্ধ পদটিকে বিশ্লেষণ করার জন্য বা সমাসের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য প্রাসঙ্গিক যে শব্দ সমষ্টি বা বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয় তাকে ‘ব্যাসবাক্য’ বা ‘বিগ্রহ বাক্য’ বলে। যেমন– চন্দ্র চূড়াতে যার – চন্দ্রচূড়।

এ বাক্যে – সমস্যমান পদ – চন্দ্র চূড়াতে

সমস্তপদ – চন্দ্রচূড়

ব্যাসবাক্য – চন্দ্র চূড়াতে যার।

৪. পূর্বপদ – সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশকে বলা হয় ‘পূর্বপদ’।

৫. পরপদ – সমাসযুক্ত পদের শেষ অংশকে বলা হয় ‘পরপদ’।

যেমন– কুলের সমীপে – উপকূল। এ বাক্যে পূর্বপদ – কুলের; পরপদ – সমীপে।

সমাসের প্রকারভেদ

সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ–

(ক) দ্বন্দ্ব সমাস,

(খ) কর্মধারয় সমাস,

(গ) দ্বিগু সমাস,

(ঘ) তৎপুরুষ সমাস,

(ঙ) অব্যয়ীভাব সমাস এবং

(চ) বহুব্রীহি সমাস।

ক. দ্বন্দ্ব সমাস : যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয় (কখনো বিয়োজক) দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।

খ. কর্মধারয় সমাস : বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ মিলে যে সমাস হয় এবং বিশেষ্যের বা পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

গ. দ্বিগু সমাস : সমাহার বা সমষ্টি বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

ঘ. তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের বিভক্তি এর লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।

ঙ. অব্যয়ীভাব সমাস : যে সমাসে অব্যয়পদ পূর্বে থাকে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রধান্য পায়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

চ. বহুব্রীহি সমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটিরই অর্থ না বুঝিয়ে সমস্ত পদে অন্য কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা পদার্থকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

 

সমাসের প্রয়োজনীয়তা কি?

সমাস ভাষাকে সুন্দর, সংক্ষিপ্ত এবং প্রাঞ্জল করে। সমাস গঠনের মাধ্যমে বক্তব্যকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায়। বক্তব্য সংক্ষিপ্ত হলে তা অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়। এতে বাক্য সরল ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। যেমনঃ ‘রাজা সিংহ চিহ্নিত আসনে বসে আছেন’ না বলে যদি আমরা বলি, ‘রাজা সিংহাসনে বসে আছেন’। এতে একদিকে যেমন ভাষা সংক্ষিপ্ত হয়। অপরদিকে শ্রুতিমধুর ও সুন্দর হয়। তাই ভাষার অলংকরণে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক।

ছয় প্রকার সমাস ছাড়াও কিছু সমাস আছে, নিম্ন আলোচনা করা হলো

নিত্য সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো সর্বদা একত্রে থাকে, ব্যাসবাক্য হয় না, অর্থ বুঝাতে হলে অন্য শব্দের সাহায্য নিতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন– কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র; অন্যগ্রাম = গ্রামান্তর।

সহসুপা বা সুপসুপা সমাসঃ সুপ্ অর্থাৎ বিভক্তিযুক্ত পদের সাথে আর একটি সুপ অর্থাৎ বিভক্তিযুক্ত পদের যে সমাস হয় তাকে সুপসুপা সমাস বলে। যেমন– পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব; পূর্বে অজ্ঞাত = অজ্ঞাতপূর্ব।

গতি সমাসঃ আবিঃ, পুরঃ, তিরঃ, প্রাদুঃ, বহিঃ, আলম, সাক্ষাৎ প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে যে সমাস হয় তাকে গতি সমাস বলে। যেমন– আবিঃ ভাব = আবির্ভাব; পুরঃ কার = পুরস্কার; প্রাদঃ ভাব = প্রাদুর্ভাব; বহিঃ কার = বহিষ্কার।

পদগর্ভ সমাসঃ যে দীর্ঘ সমাসের গর্ভে বহু পদের সমাবেশ থাকে তাকে পদগর্ভ সমাস বলে। যেমন– সব জান্তা লোক।

মিশ্র সমাসঃ ভাষায় যে সমাসের ব্যবহার হয় তা বিভিন্ন সমাসের মিশ্ররূপ। যেমন– বান-বিদ্ধ-মীন-মতো ইত্যাদি।