মাটি হলো ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত নানারকম জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ যাতে উদ্ভিদ ও গাছপালা জন্মায়। মাটির নির্দিষ্ট স্তরবিন্যাস আছে। এটি উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয় এবং দাঁড়িয়ে থাকতে সহায়তা করে।
মাটি প্রকারভেদ (Types of Soil)
মাটি সাধারণত চার প্রকার। এগুলো নিচে আলোচনা করা হল :
১. বেলে মাটি : শতকরা ৮০ ভাগ বালুকণাবিশিষ্ট মাটিই বেলে মাটি। এ ধরনের মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম কিন্তু শোষণক্ষমতা বেশি। এতে কোন জৈব পদার্থের উপস্থিতি নেই।
২. দোআঁশ মাটি : এ ধরনের মাটিতে মাটির কণাগুলোর প্রতিটিই প্রায় সমপরিমাণে থাকে। এ মাটির পানি ধারণ ও শোষণক্ষমতা উভয়ই বেশি।
৩. এঁটেল মাটি : শতকরা ৪০-৫০ ভাগ কর্দম কণাবিশিষ্ট মাটিকে এঁটেল মাটি বলে। এর পানি ধারণক্ষমতা বেশি কিন্তু শোষণক্ষমতা কম। এ মাটি ভেজা অবস্থায় আঠালো কিন্তু শুকনা অবস্থায় খুবই শক্ত হয়।
৪. পলিমাটি : এ মাটির কণাগুলো বেলে মাটির কণার তুলনায় আকারে ছোট। পলি মাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান থাকে এবং এক পর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলি আকারে জমে পড়ে। এ মাটির কণাগুলো দানাদার এবং এতে উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।
মাটির দিগবলয় বা হরাইজোন কাকে বলে?
মাটি ৪টি সমান্তরাল স্তরে বিভক্ত। মাটির এই চারটি সমান্তরাল স্তরের প্রতিটি স্তরকে মাটির দিগবলয় বা হরাইজোন (Horizon) বলে।
মাটির চারটি স্তরের উপরের স্তরটি হচ্ছে হরাইজোন A (Horizon A) বা টপ সয়েল। এই স্তরে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ পচে এবং পচনের ফলে উৎপাদিত বিশেষ পদার্থ হিউমাসসহ অন্যান্য জৈব পদার্থ এ স্তরে থাকে। তবে এ স্তরে খনিজ পদার্থ থাকে না। টপ সয়েল বা হরাইজোন A এর পরের স্তর হলো সাব সয়েল (Sub Soil) বা হরাইজোন B (Horizon B)। এ স্তরে টপ সয়েল থেকে আসা খনিজ পদার্থ জমা থাকে এবং সামান্য পরিমাণ হিউমাস থাকে।
হরাইজোন C (Horizon C) হচ্ছে মাটির তৃতীয় স্তর। এ স্তরের নিচে থাকে শিলা যা খুব শক্ত। মূল শিলা থেকেই মাটি তৈরি হয়। মূল শিলা পরিবর্তিত হয়ে যে নরম শীলায় পরিণত হয় তা Horizon-C তে জমা থাকে।
Horizon-C এর নিচে থাকা কঠিন শিলাময় স্তরটি মাটির ৪র্থ স্তর।
মাটি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
মাটির উৎপাদন ক্ষমতা কি?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনায় চাষকৃত মাটির স্বাভাবিক অবস্থায় নির্দিষ্ট এক বা একাধিক ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির যে ক্ষমতা তাকে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়। এক কথায়, মাটির ফসল উৎপাদন করার ক্ষমতাকে মাটির মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বলে। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা ফসলের ফলন দ্বারা পরিমিত হয়। মাটি ও ফসল ব্যবস্থাপনা দ্বারা মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
কীভাবে মাটি সংরক্ষণ করা যায়?
উত্তরঃ মাটি সংরক্ষণের সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো। মাটিতে তৃণগুল্ম ও দুর্বা বা অন্য যেকোনো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ ও অন্যান্য গাছপালা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাত ও মাটির ক্ষয়সাধন করতে পারে না। গাছের শিকড় মাটির ভিতরে থাকায় তা মাটিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। জমিতে ফসল তোলার পর তা উপরে না তুলে গোড়া জমিতে রেখে দিলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়ে অন্যদিকে তেমনি জমির ক্ষয়ও কমে যায়। ঢালু জায়গা দিয়ে পানি যাতে প্রবাহিত না হতে পারে সে উদ্দেশ্যে ঢালু জায়গায় ঘাস, ধনচে বা কলমি জাতীয় গাছ লাগিয়ে মাটির ক্ষয়রোধ করা হয়।
ফসল উৎপাদনে দো-আঁশ মাটি উপযোগী কেন?
উত্তরঃ ফসল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী। কারণ, এই মাটি বালি, পলি ও কাদামাটির সমন্বয়ে তৈরি হয়। দো-আঁশ মাটির একদিকে যেমন পানি ধারণক্ষমতা ভালো আবার প্রয়োজনের সময় পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে। তাই ফসল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী।
মাটির রং লালচে হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ লৌহের পরিমাণ বেশি হলে মাটি সাধারণত লাল দেখায়। কারণ আয়রন অক্সাইডের রং লাল। তাই যে অঞ্চলের মাটিতে আয়রন অক্সাইডের পরিমাণ বেশি সে অঞ্চলের মাটির রং লাল। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এরকম লালচে মাটি দেখা যায়।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির নিয়ামকগুলো কী কী?
উত্তরঃ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির নিয়ামকগুলো হলো–
১. খনিজ পদার্থ;
২. জৈব পদার্থ;
৩. ভূমির বন্ধুরতা;
৪. জমিচাষ;
৫. পানিসেচ;
৬. রাসায়নিক সার প্রয়োগ;
৭. জৈব সার প্রয়োগ।