ক্ষার ধাতু ও মৃৎক্ষার ধাতু কাকে বলে? ক্ষার ধাতু ও মৃৎ ক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্য কি কি?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার গঠন করে তাদেরকে ক্ষার ধাতু বলে। পর্যায় সারণির গ্রুপ-১ এ এদের অবস্থান। ক্ষার ধাতু মোট ৬টি। এগুলো হলো– লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), রুবিডিয়াম (Rb), সিজিয়াম (Cs), এবং ফ্রান্সিয়াম(Fr)।
ইলেকট্রন বিন্যাস করলে এদের সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের s-অরবিটালে একটি ইলেকট্রন থাকে। ক্ষার ধাতুসমূহ অধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে আয়নিক লবণ গঠন করে। ক্ষার ধাতুগুলির আয়নিকরণ শক্তি, ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা যেকোনো পর্যায়ের অন্য মৌল গুলির চেয়ে কম হয়। ক্ষার ধাতু সমূহ সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর থেকে একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে একক ধনাত্মক আয়ন গঠন করে এবং এদের নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে স্থিতিশীলতা লাভ করে। ক্ষার ধাতুসমূহ অধিক সক্রিয় হয়।

ক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্য (Properties of Alkali metal)

  • ক্ষার ধাতু পর্যায় সারণির গ্রুপ-১ এ অবস্থিত। এরা খুব সক্রিয় বলে মুক্ত অবস্থায় প্রকৃতির মধ্যে পাওয়া যায় না। এই ধাতুগুলির অক্সাইড এবং হাইড্রক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে, তাই এদের ক্ষার ধাতু বলা হয়।
  • গ্রুপ 1 এ যত নিচের দিকে যাওয়া যায় এর সক্রিয়তা ততই বাড়তে থাকে।
  • এদের আয়নিক বন্ধন গঠনের প্রবণতা বেশি থাকে।
  • এরা নরম, চকচকে ও অধিক সক্রিয়। এরা কক্ষ তাপমাত্রায় বিক্রিয়া করে।
  • এর যোজ্যতা ইলেকট্রন একটি।
  • এরা ক্ষারীয় ধর্মবিশিষ্ট হয়।
  • এরা দূর্বল ধাতব বন্ধন গঠন করে।
  • এদের গলনাংক ও স্ফুটনাংক অন্যান্য ধাতুর তুলনায় অনেক কম।
  • পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং ক্ষার তৈরি করে।
  • এরা হ্যালোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব হ্যালাইড উৎপন্ন করে। যেমন : NaCl (সোডিয়াম ক্লোরাইড)।

 

মৃৎ ক্ষার ধাতু কাকে বলে? (What is called Alkaline earth metal in Bengali/Bangla?)

পর্যায় সারণির গ্রুপ-২ এর মৌলসমূহকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে। গ্রুপ-2 এর মৌল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামকে মাটির উপাদান হিসেবে পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর সাথে গ্রুপ-২ এর অন্য মৌলগুলির ধর্মের মিল থাকার কারণে এদেরকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে। এ গ্রুপের মৌল সমূহ বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), ক্যালসিয়াম (Ca), স্ট্রোনসিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba), রেডিয়াম (Ra)। মৃৎক্ষার ধাতুসমূহ পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোক্সাইড গঠন করে। মৃৎক্ষার ধাতুর হাইড্রোক্সাইডগুলো এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি গঠন করে। মৃৎক্ষার ধাতুর সক্রিয়তা ক্ষার ধাতুর থেকে কিছুটা বেশি।

এদের আয়নিকরণ শক্তি, ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা ক্ষার ধাতুর থেকে বেশি। মৃৎক্ষার ধাতুর বহিঃস্থ শক্তিস্তরে নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস অপেক্ষা দুটি ইলেকট্রন বেশি থাকে এইজন্য এরা স্থিতিশীলতা লাভের জন্য সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর থেকে দুইটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে দ্বি-ধনাত্মক আয়ন গঠন করে এবং স্থিতিশীলতা প্রাপ্ত হয়। এরা কার্বনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতুর কার্বাইড গঠন করে। আবার এরা নাইট্রোজেন এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতুর নাইট্রাইড গঠন করে।

 

মৃৎ ক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্য (Properties of Alkaline earth metal)

এদের বৈশিষ্ট্যঃ–

  • মৃৎ ক্ষার ধাতু তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক।
  • এদেরকে মাটিতে ক্ষার হিসেবে পাওয়া যায়।
  • এরা তীব্র ক্ষারধর্মী।
  • এরা অত্যন্ত সক্রিয় ধাতু, তবে এদের সক্রিয়তা ক্ষার ধাতুর চেয়ে কম।
  • এদের যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা ২।
  • এদের যোজনী ২।
  • এরা পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষার উৎপন্ন করে।
  • এদের সক্রিয়তা পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ে।
  • এরা পর্যায় সারণির গ্রুপ-২ এ অবস্থিত।
  • এরা সকলে ধাতু।
ক্ষার ধাতু ও মৃৎক্ষার ধাতু সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

ক্ষার ধাতু কোন গ্রুপের মৌল?

উত্তরঃ 1A গ্রুপের।

 

মৃৎক্ষার কোন গ্রুপের মৌল?

উত্তরঃ ২ গ্রপের।

 

বেরিয়ামকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয় কেন?

উত্তরঃ গ্রুপ-IIA এ অবস্থিত বেরেলিয়াম (Be), ম্যাগনেশিয়াম (Mg), ক্যালসিয়াম (Ca), স্ট্রেন্সিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba), রেডিয়াম (Ra), মৌলগুলোকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়। যেহেতু বেরিয়াম (Ba) মৌলটি গ্রুপ-IIA এ অবস্থিত। তাই বেরিয়াম (Ba) কে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়।