রক্ত কি? রক্তের উপাদান ও কাজ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রক্ত হচ্ছে প্লাজমা ও প্লাজমায় ভাসমান বিভিন্ন কোষীয় উপাদানে গঠিত জটিল তরল টিস্যু। এটি একটি অস্বচ্ছ, মৃদু ক্ষারীয় লবণাক্ত তরল পদার্থ। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে অর্থাৎ দৈহিক মোট ওজনের প্রায় ৮%। এর pH মাত্রা ৭.৩৫-৭.৪৫ এবং তাপমাত্রা ৩৬-৩৮° সেলসিয়াস। রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানির চেয়ে বেশি, প্রায় ১.০৬৫। অজৈব লবণের উপস্থিতির জন্য রক্তের স্বাদ নোনতা। সুনির্দিষ্ট বাহিকার মাধ্যমে রক্ত দেহের সবখানে (যেমন– হৃৎপিন্ড, শিরা, উপশিরা, ধমনি, শাখা ধমনি ও কৈশিকনালি) সঞ্চালিত হয়। এছাড়া রক্ত জীবনীশক্তির মূল। রক্তনালীর মধ্য দিয়ে রক্ত দেহের সব জায়গায় প্রবাহিত হয় ও কোষে অক্সিজেন ও খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে। রক্ত সংবহনতন্ত্রে প্রবাহিত রক্তের মাধ্যমেই খাদ্য, অক্সিজেন এবং বর্জ্য পদার্থ দেহের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়।

রক্তের উপাদান
রক্ত এক ধরনের তরল যােজক কলা। রক্তরস এবং কয়েক ধরনের রক্তকণিকার মিলিয়ে রক্ত গঠিত।

রক্তরস (Plasma) : রক্তের বর্ণহীন তরল অংশকে রক্তরস বলে। সাধারণত রক্তের শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ রক্তরস। রক্তরসের প্রধান উপাদান পানি। এছাড়া বাকি অংশে কিছু প্রােটিন, জৈবযৌগ ও সামান্য অজৈব লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এর মধ্যে যে পদার্থগুলাে থাকে তা হলাে:
(i) প্রােটিন বা আমিষ, যথা অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন ও ফাইব্রিনােজেন
(ii) গ্লুকোজ
(iii) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্বিকণা
(iv) খনিজ লবণ
(v) ভিটামিন
(vi) হরমােন
(vii) এন্টিবডি
(viii) বর্জ্য পদার্থ যেমন : কার্বন ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি। এছাড়া সামান্য পরিমাণে সােডিয়াম ক্লোরাইড, সােডিয়াম বাইকার্বোনেট ও অ্যামাইনাে এসিড থাকে। আমরা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তা পরিপাক হয়ে অন্ত্রের গাত্রে শােষিত হয় ও রক্তরসে মিশে যায় এবং দেহের সব জায়গায় সঞ্চালিত হয়।

রক্তের কাজ
রক্ত দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে, যেমন–

  • অক্সিজেন পরিবহন: লােহিত রক্তকণিকা অক্সিহিমােগ্লোবিনরূপে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে।
  • কার্বন ডাই -অক্সাইড অপসারণ: রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষগুলােতে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়, রক্তরস সােডিয়াম বাই কার্বনেটরূপে তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে এবং নিঃশ্বাস বায়ুর সাথে ফুসফুসের সাহায্যে দেহের বাইরে বের করে দেয়।
  • খাদ্যসার পরিবহন: রক্তরস গ্লুকোজ, অ্যামাইনাে এসিড, চর্বিকণা ইত্যাদি কোষে সরবরাহ করে।
  • তাপের সমতা রক্ষা: দেহের মধ্যে অনবরত দহনক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার তাপ সৃষ্টি হয় এবং তা রক্তের মাধ্যমে দেহের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে দেহের সব জায়গায় তাপের সমতা রক্ষা হয়।
  • বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন: রক্ত দেহের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বহন করে এবং বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সেসব ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড হিসেবে নিষ্কাশন করে।
  • হরমােন পরিবহন: হরমােন নালিবিহীন গ্রন্থিতে তৈরি এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ বা রস। এই রস সরাসরি রক্তে মিশে প্রয়ােজন অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হয় এবং বিভিন্ন জৈবিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • রােগ প্রতিরােধ: কয়েক প্রকারের শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্ত দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • রক্ত জমাট বাঁধা: দেহের কোনাে অংশ কেটে গেলে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দেহের বের হওয়া বন্ধ করে।

এ সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। রক্ত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেন?

উত্তর : রক্ত দেহের নানান ধরনের কাজ করে। রক্ত সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। দেহকোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণ করে, দেহকোষে খাদ্যসার পরিবহন করে, দেহে তাপের সমতা রক্ষা করে, দেহের সব ধরনের দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ বহন ও নিষ্কাশন করে সারা দেহে প্রয়োজনীয় হরমোন পরিবহন করে। রক্তের শ্বেত কণিকা জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করে। এসকল কাজের জন্যই রক্ত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

২। থ্রম্বোসিস বলতে কী বুঝায়?

উত্তরঃ রক্তনালির অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধার পদ্ধতিকে থ্রম্বোসিস বলে। রক্তবাহস্থিত রক্তমণ্ডকে থ্রম্বাস (Thrombus) বলে। হৃৎপিণ্ডের করোনারি রক্তনালিকায় রক্ত জমাট বাঁধলে তাকে করোনারি থ্রম্বোসিস (Coronary thrombosis) এবং গুরুমস্তিষ্কের রক্তনালিকায় রক্ত জমাট বাঁধলে তাকে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস (Cerebral thrombosis) বলে।