কৌটাজাতকরণ বা ক্যানিং হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের একটি আধুনিক ও উন্নত ধরনের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্যকে বায়ুরোধী অবস্থায় বা আগুনে শোধিত করে সাধারণত প্রিজারভেটিভ যোগ করে কৌটার মধ্যে রেখে সংরক্ষণ করা হয়, যেন এর খাদ্যমান ও স্বাদ অক্ষুণ্ন থাকে। এই খাদ্যদ্রব্যকে বহুদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন দূর করে খাদ্যকে জারণের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও এনজাইম বিনষ্ট এবং অনাকাঙ্খিত ব্যকটেরিয়া ধ্বংসের জন্যেও এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এই পদ্ধতিতে মাছ, মাংস, ফল, সবজি এমনকি দুধও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতি ব্লাঞ্চিং, একজস্টিং, সিলিং, স্টেরিলাইজিং সহ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।
সুইডিস রসায়নবিদ ১৭৮১ সালে সর্ব প্রথম ভিনেগার কৌটাজাতকরণ করেন। ১৮১০ সালে ফ্রান্সের নিকোলাস অ্যাপার্ট কৌটাজাতকরণের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
কৌটা বা ক্যান দু’ধরনের হয়, যথা—
১. ড্রোউন অ্যান্ড আয়রন ক্যান : এই ক্যান বাণিজ্যিকভাবে সর্বপ্রথম অ্যামেরিকায় ১৯৬৪ সালে অবিষ্কার হয়। ১৯৭২ সালে এটা তিন প্লেট দ্বারা তৈরি হয়েছিল।
২. ড্রোউন অ্যান্ড রিড্রোউন ক্যান : এই ক্যান তৈরির পর কোনোরূপ ধৌত করার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া বর্তমানে বাজারে টু-পিস- (Two Piece) নামক এক ধরনের ক্যান পাওয়া যায়। যার উপকারিতা সিঙ্গেল পিস-ক্যান অপেক্ষা অনেক বেশি।
যেসব খাদ্য কৌটাজাতকরণ করা যায় : আমাদের দেশে উৎপাদিত অনেক খাদ্য আছে কৌটাজাতকরণ করা সম্ভব। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল ও তাদের রস, শাক-সবজি ও মাছ-মাংস।
খাদ্য কৌটাজাতকরণে ব্লাঞ্চিং করা হয় কেন?
খাদ্যদ্রব্যকে কৌটাজাতকরণে ব্লাঞ্চিংকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এ পর্যায়ে খাদ্যদ্রব্যকে ফুটন্ত পানিতে অথবা বাষ্পের সাহায্যে ৫-১০ মিনিট সময় উত্তপ্ত করা হয়। ফলে খাদ্যদ্রব্য জীবাণুমুক্ত হয়।খাদ্যের অসহনীয় ও কটু ঘ্রাণ থাকলে তা অপসারিত হয়। এনজাইম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। শাকসবজির পিচ্ছিল পদার্থ থাকলে তাও অপসারিত হয়। এ প্রক্রিয়ার শেষে খাদ্যদ্রব্য আয়তনে কমে যায় ফলে কৌটাজাতকরণ সহজ ও সুষম হয়। এ পর্যায়ে খাদ্যদ্রব্যের রান্নার কাজ কিছুটা সম্পন্ন হয়ে যায়।
কৌটাজাতকরণের প্রধান উদ্দেশ্যই বায়ু নিরোধ কী?