পরমাণু মডেল কি? What is Atom Model in Bangla?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জন ডাল্টনের পরমাণু মতবাদের পরপরই পরমাণুর গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯৭-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন বিজ্ঞানী পরমাণুর উপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ উপস্থাপন করেন। যা পরমাণু মডেল নামে পরিচিত। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো–

(১) থমসন পামপুডিং পরমাণু মডেল : 1898 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।

(২) রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল : 1911 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।

(৩) বোর পরমাণু মডেল : 1913 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।

(৪) বোর-সমারফিল্ড পরমাণু মডেল : 1916 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।

(৫) তরঙ্গ বলবিদ্যা পরমাণু মডেল : 1924 খ্রিস্টাব্দে লুই দ্য ব্রগলি কর্তৃক প্রকাশিত।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল (Rutherford’s Atom Model)

১৯১১ সালে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের ছাত্র এইচ গিগার এবং ই মার্সডেন বিখ্যাত আলফা কণা পরীক্ষা পরিচালনা করেন যা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে। তারা বিশেষ পদ্ধতিতে অতি পাতলা (০.০০০৪ মিমি) সোনার পাতে প্রায় ২০০০০ আলফা কণার প্রবাহ নিক্ষেপ করে দেখেন যে, অধিকাংশ আলফা কণা পাত ভেদ করে পিছনে রাখা গোলাকার ZnS পদার্কে দীপ্তিমান করে। দু একটি আলফা কণা এদিক সেদিক বিক্ষিপ্ত হয় ও একটি আলফা কণা পিছনে ফিরে আসে। রাদারফোর্ড এই পরীক্ষার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পরমাণুর মডেল প্রদান করেন।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল (বা নিউক্লিয়ার মডেল) টি নিম্নরূপ :

১। পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারি বস্তু বিদ্যমান। এই ভারি বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলা হয়। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য। নিউক্লিয়াসে পরমাণুর সমস্ত ধনাত্মক চার্জ ও ভর কেন্দ্রীভূত।

২। পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। অতএব নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জ সংখ্যার সমান সংখ্যক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে পরিবেষ্টিত করে রাখে।

৩। সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহের মতো পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো এর কেন্দ্রস্থ নিউক্লিয়াসের চারদিকে সতত ঘূর্ণায়মান। ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসের সাথেও ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রনসমূহের পারস্পরিক স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণজনিত কেন্দ্রমুখী বল এবং ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের কেন্দ্রবিমুখি বল পরস্পর সমান অর্থাৎ পরস্পরকে সমভার করে।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলে নিউক্লিয়াসের ধারণা অন্তর্ভুক্ত আছে বলে একে পরমাণুর নিউক্লিয়ার মডেলও বলে। আবার সৌরজগতের সাথে সাদৃশ্য রেখে মডেলটি কল্পনা সোলার সিস্টেম এটম মডেল (Solar System Atom Model) ও বলা হয়।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা (Limitations of Rutherford Atom Model)

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের প্রধান দিক যেমন পরমাণুর একটি নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেকট্রন অঞ্চল আছে তা আজ সর্বজনস্বীকৃত ও পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু সৌরমণ্ডলের ন্যায় পরমাণুর যে মডেল রাদারফোর্ড প্রদান করেন, তার প্রধান ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা হচ্ছে নিম্নরূপ:

১। সৌরমণ্ডলের গ্রহসমূহ সামগ্রিকভাবে চার্জবিহীন, অথচ ইলেকট্রনসমূহ ঋণাত্মক চার্জযুক্ত।

২। ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বানুসারে কোনো চার্জযুক্ত বস্তু বা কণা অপর কোনো চার্জযুক্ত বস্তুকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে ঘুরলে তা ক্রমাগতভাবে শক্তি বিকিরণ করবে এবং তার আবর্তনশীল বৃত্তাকার পথ ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকবে। সুতরাং এক্ষেত্রে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনসমূহ ক্রমশ শক্তি হারাতে হারাতে নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করবে। ফলে পরমাণুর অস্তিত্ব ধ্বংস হবে। অথচ পরমাণু হতে ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ বা ইলেকট্রনসমূহের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ কখনই ঘটে না।

৩। পরমাণুর বর্ণালি সম্বন্ধে কোনো সুষ্ঠু ব্যাখ্যা এ মডেল দিতে পারে না। যেহেতু কোনো কণা (অণু-পরমাণু, ইলেকট্রন বা প্রোটন) যে শক্তি শোষণ বা নিঃসরণ করে তা বিচ্ছিন্নভাবে হয়। কিন্তু বাস্তবে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল তা ব্যাখ্যা করতে পারে না।

৪। আবর্তনশীল ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্বন্ধে কোনো ধারণা রাদারফোর্ডের মডেলে দেয়া হয়নি।

৫। একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কীভাবে পরিক্রমণ করে, তার কোনো উল্লেখ এ মডেলে নেই।