প্লাস্টিক শব্দের অর্থ হলো সহজেই ছাঁচযোগ্য। নরম অবস্থায় প্লাস্টিক ইচ্ছামতো ছাঁচে ফেলে সেটা থেকে নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি বিশিষ্ট পদার্থ তৈরি করা যায়। আমরা বাসাবাড়িতে নানা রকম প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করছি। মগ, বালতি, জগ, মেলামাইনের থালা-বাসন, পিভিসি পাইপ, বাচ্চাদের খেলনা, গাড়ির সিটবেল্ট, এমনকি আসবাবপত্র সবকিছুই প্লাস্টিকের তৈরি। তোমরা জান যে এগুলো সবই পলিমার পদার্থ। এবারে প্লাস্টিকের ধর্ম সম্পর্কে একটুখানি জেনে নেওয়া যাক।
প্লাস্টিকের ভৌত ধর্ম
প্লাস্টিক কি পানিতে দ্রবীভূত হয়? না, হয় না। বেশির ভাগ প্লাস্টিকই পানিতে অদ্রবণীয়। প্লাস্টিকের একটি গুরুত্বপুর্ণ ধর্ম হলো এরা বিদ্যুৎ এবং তাপ পরিবহন করে না। তাই বিদ্যুৎ এবং তাপ নিরোধক হিসেবে এদের বহুল ব্যবহার রয়েছে। প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় ধর্ম হলো গলিত অবস্থায় এদেরকে যেকোনো আকার দেওয়া যায়। এই সুবিধার কারণেই এটি নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়। তাপ দিলে প্লাস্টিকে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে? পলিথিন, পিভিসি পাইপ, পলিস্টার কাপড়, বাচ্চাদের খেলনা এসব প্লাস্টিক তাপ দিলে নরম হয়ে যায় এবং গলিত প্লাস্টিক ঠাণ্ডা করলে শক্ত হয়ে যায়। এভাবে যতবারই এদেরকে তাপ দেওয়া যায়, এরা নরম হয় ও ঠাণ্ডা করলে শক্ত হয়। এগুলোকে থার্মোপ্লাস্টিকস (Thermoplastics) বলে। অন্যদিকে মেলামাইন, বাকেলাইট (যা ফ্রাইং প্যানের হাতলে এবং বৈদ্যুতিক সকেটে ব্যবহার করা হয়) এগুলো তাপ দিলে নরম হয় না বরং পুড়ে শক্ত হয়ে যায়। এদেরকে একবারের বেশি ছাঁচে ফেলে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া যায় না। এই সকল প্লাস্টিককে থার্মোসেটিং প্লাস্টিকস (Thermosetting Plastics) বলে।
প্লাস্টিকের রাসায়নিক ধর্ম
বেশির ভাগ প্লাস্টিক রাসায়নিকভাবে যথেষ্ট নিষ্ক্রিয়। তাই বাতাসের জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে না এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। এমনকি পাতলা এসিড বা ক্ষারের সাথেও প্লাস্টিক বিক্রিয়া করে না। তবে শক্তিশালী ও ঘনমাত্রার এসিডে কিছু কিছু প্লাস্টিক দ্রবীভূত হয়ে যায়। প্লাস্টিক সাধারণত দাহ্য হয় অর্থাৎ এদেরকে আগুন ধরালে পুড়তে থাকে এবং প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন করে। প্লাস্টিক কি পচনশীল? না, প্লাস্টিক পচনশীল নয়। দীর্ঘদিন মাটি বা পানিতে পড়ে থাকলেও এসব পচে না। অবশ্য বর্তমানে বিজ্ঞানীরা পচনশীল প্লাস্টিক আবিষ্কার করেছেন, সেগুলো বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয়। হাত-পা কেটে গেলে বা মেডিক্যাল অপারেশনে সেলাইয়ের কাজে যে সুতা ব্যবহৃত হয়। সেগুলো এক ধরনের পচনশীল প্লাস্টিক। প্লাস্টিক পোড়ালে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হয়। যেমন: পিভিসি পোড়ালে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) নিঃসৃত হয়। আবার পলিইউরেথেন (Polyurethane) প্লাস্টিক (যা আসবাবপত্র, যেমন: চেয়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়) পোড়ালে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস এবং হাইড্রোজেন সায়ানাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়।