হেসের সূত্র কি? (What is Hess’s law in Bengali/Bangla?)
১৮৪০ সালে বিজ্ঞানী জি. এইচ. হেস তাপ রসায়নের যে সূত্রটি প্রকাশ করেন তা হেসের তাপ সমষ্টিকরণ সূত্র নামে পরিচিত। সূত্রটি হচ্ছে- “কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক এবং উৎপাদসহ অন্য সকল শর্ত অপরিবর্তিত থাকলে বিক্রিয়াটি এক ধাপেই ঘটুক বা একাধিক ধাপেই ঘটুক না কেন মোট তাপশক্তি তথা এনথালপির কোন পরিবর্তন হবে না।”
সহজভাবে বললে, “যদি আদি ও শেষ অবস্থা স্থির থাকে তবে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়া দুই বা ততােধিক উপায়ে এক বা অধিক ধাপে সংঘটিত হতে পারে। তবে যে পথই অবলম্বন করা হােক না কেন, মােট বিক্রিয়া তাপ সমান থাকবে।”
হেসের সূত্রের প্রয়োগ (Application of Hess’s law)
হেসের সূত্রের প্রধান সার্থকতা হলো সাধারণ বীজগণিতীয় সমীকরণের ন্যায় তাপ রাসায়নিক সমীকরণের ক্ষেত্রেও যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি সাধারণ প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা যায়।
হেসের সূত্রের কতকগুলো উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ তুলে ধরা হলো–
- পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয়ের অযোগ্য বিক্রিয়ার বিক্রিয়া তাপ নির্ণয় : কার্বনকে অক্সিজেনে দগ্ধ করে কার্বন মনোক্সাইডে পরিণত করলে তাপের যে উদ্ভব ঘটে তা পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয় করা কঠিন কিন্তু হেসের সূত্র প্রয়োগ করে পরোক্ষভাবে এই মান সহজেই নির্ণয় করা যায়।
- মন্থর বিক্রিয়ার তাপ পরিবর্তন নির্ণয় : যে সব বিক্রিয়া ধীরগতিতে সংঘটিত হয়, পরীক্ষার মাধ্যমে এসব বিক্রিয়ার তাপ পরিবর্তন নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। হেসের সূত্র প্রয়োগ করে এসব বিক্রিয়ার তাপ পরিবর্তন হিসেব করা যায়। রম্বিক সালফার থেকে মনোক্লিনিক সালফারে পরিবর্তন এত ধীরে ঘটে যে, এ ক্ষেত্রে তাপ পরিবর্তনের মান সরাসরি নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয় কিন্তু হেসের সূত্র প্রয়োগ করে পরোক্ষভাবে এর মান নির্ণয় করা যায়।
- যৌগের সংগঠন তাপ নির্ণয় : প্রত্যক্ষভাবে যে সকল পদার্থের সংগঠন তাপ নির্ণয় করা যায় না, হেসের সূত্র প্রয়োগ করে পরোক্ষভাবে সেসকল পদার্থের সংগঠন তাপ নির্ণয় করা যায়। উদাহরণ, পরীক্ষা দ্বারা মিথেন, মিথানল, ইথানল, বেনজিন ইত্যাদি যৌগের সংগঠন তাপ নির্ণয় করা না গেলেও হেসের সূত্র প্রয়োগ করে এগুলোর সংগঠন তাপ নির্ণয় করা যায়।