ফরমালিন কি? (What is Formalin in Bengali/Bangla?)
ফরমালিন হচ্ছে মিথান্যাল বা ফরম্যালডিহাইডের (CH2O) ৩০-৪০% জলীয় দ্রবণ। ফরমালিনে ৪০ ভাগ মিথান্যাল আর ৬০ ভাগ পানি থাকে। এটি দেখতে সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। জীবাণুনাশক হওয়ার কারণে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসাবেও ব্যবহার করা হয়।
ফরমালিন দিয়ে খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণ নিষিদ্ধ কেন?
ফরমালিনের মূল উপাদান ফরমালডিহাইড সকল প্রাণীর জন্য বিষাক্ত পদার্থ। এটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। অধিক মাত্রায় ফরমালডিহাইড শরীরে প্রবেশ করলে তীব্র পেট ব্যথা, কিডনি সমস্যা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ফরমালিন দিয়ে খাদ্য দ্রব্য সংক্ষণ নিষিদ্ধ।
ফরমালিন ব্যবহারের সুবিধা
ফরম্যালডিহাইডের ৩০-৪০% জলীয় দ্রবণ মেডিকেল ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণীজ অঙ্গ, টিস্যু নমুনা, বায়োলজিক্যাল নমুনা সংরক্ষণে ফরমালিন একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রবণ। এন্টি ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুনাশক হিসেবে ফরমালিন একটি কার্যকর এজেন্ট। ফরমালিনের অপর ব্যবহার হচ্ছে হেক্সামিন প্রস্তুতিতে যা বাতজ্বর ও মুত্রাশয়ের পীড়ায় ব্যবহার করা হয়। অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছের প্যারাসাইট সংক্রমণ রোধে ফরমালিন ব্যবহৃত হয়। পরিমার সংশ্লেষণে ফরম্যালডিহাইড ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে ডেলরিন, ইউরিয়া ফরম্যালডিহাইড রেজিন, মেলামাইন-রেজিন (ফরমিকা), ফেনল ফরম্যালডিহাইড রেজিন (ব্যাকেলাইট) অন্যতম। ফরম্যালডিহাইড ব্যবহারের প্রায় ৫০%ই ব্যবহৃত হয় রেজিন উৎপাদনে। জীবাণুনাশক হিসেবে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং স্পোরের ধ্বংস সাধনে ফরমালিনের উচ্চ কার্যকারিতা রয়েছে।
ফরমালিন ব্যবহারের অসুবিধা
ফরমালিনের বেশি ব্যবহার, বিষাক্ততা, উদ্বায়ীতা এবং মানব স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকির কারণে বিভিন্ন দেশে কঠোরভাবে এর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। 2011 সালে US National Toxicology Program ফরমালডিহাইডকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফরমালিনের অপব্যবহারের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হচ্ছে, অসাধু ব্যক্তিরা বিভিন্ন ফল, শাকসবজি, মাংস, মাছ এবং দুধে ফরমালিন যোগ করে এদের সংরক্ষণ সময় বৃদ্ধি করে। ফরমালডিহাইডের আণবিক ভর এবং উচ্চ দ্রাব্যতার প্রেক্ষাপটে এটি সহজেই কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। উচ্চ সক্রিয়তার কারণে এটি সহজেই কোষের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের (DNA, এনজাইম) সাথে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। এ কারণে ক্যান্সার ছাড়াও কিডনী, লিভার, পাকস্থলী ফরমালডিহাইড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উল্লেখ্য, ফরমালিন পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় অজানাবশত ফরমালিন যুক্ত কোনো ফলমূল বা মাছ বাজার হতে কেনার পর তা ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিলে ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হ্রাস পায়।