ট্রানজিস্টর (Transistor)
১৯৪৭ সালে বেল ল্যাবরেটরিতে প্রথম ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয় এবং এই আবিষ্কারের জন্য জন বারডিন, ওয়াল্টার ব্ৰটেইন এবং উইলিয়াম শকলিকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এই ট্রানজিস্টর কত দ্রুত এবং কত ব্যাপকভাবে পুরো পৃথিবীকে পাল্টে দেবে সেটি তখনো কেউ অনুমান করতে পারেনি।
ট্রানজিস্টর ভ্যাকুয়াম টিউবের মতোই কাজ করতে পারে কিন্তু ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় এটি অতি ক্ষুদ্র, ওজন খুবই কম, এটি ব্যবহার করতে খুব অল্প বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, এটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে বড় কথা এটি অনেক কম খরচে তৈরি করা সম্ভব। কাজেই ট্রানজিস্টর খুব দ্রুত ভ্যাকুয়াম টিউবকে সরিয়ে তার স্থান দখল করে নিতে শুরু করল এবং পৃথিবীর মানুষ স্বল্প মূল্যে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরি নানা ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পেতে শুরু করল।
ভ্যাকুয়াম টিউব (Vacuum Tube)
১৮৮৩ সালে এডিসন দেখেছিলেন লাইট বাল্বের ভেতরে ফিলামেন্ট থেকে অন্য একটি ধাতব প্লেটে ফাঁকা জায়গা দিয়েও বিদ্যুৎ পরিবহন হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি এডিসন ক্রিয়া (Edison Effect) নামে পরিচিত। ১৯০৪ সালে জন ফ্লেমিং এডিসন ক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্রথম দুই ইলেকট্রোডের একটি ভ্যাকুয়াম টিউব তৈরি করেন যেটি রেকটিফায়ার হিসেবে কাজ করত অর্থাৎ পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎপ্রবাহকে একদিকে প্রবাহিত করত। এই ভ্যাকুয়াম টিউবটিকে ইলেকট্রনিকসের শুরু হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই সময় রেডিও তরঙ্গ দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ শুরু হয়েছিল এবং গুগলিয়েলমাে মার্কনির রেডিও তরঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ধরনের একটি ভ্যাকুয়াম টিউবের খুব প্রয়ােজন ছিল। (এখানে উল্লেখ্য যে রেডিওর আবিষ্কার হিসেবে এতদিন শুধু মার্কনির নাম উল্লেখ করা হলেও সাম্প্রতিক কালে বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর অবদানকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে)।
১৯০৬ সালে লি দ্য ফরেস্ট তৃতীয় একটি ইলেকট্রোড সংযােজন করে নতুন আরেকটি ভ্যাকুয়াম টিউব তৈরি করেন এবং সেটি ট্রায়ােড নামে পরিচিতি লাভ করে। ট্রায়ােড দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত এবং সেটি অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে কাজ করতে পারত।
প্রথমে মাের্সকোড দিয়ে টেলিগ্রাফ যােগাযােগ পরে টেলিফোনের মাধ্যমে কণ্ঠস্বর আদান-প্রদান করার জন্য ভ্যাকুয়াম টিউবের উন্নতি হতে থাকে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাডার, যুদ্ধাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, নেভিগেশন ইত্যাদি কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার হতে থাকে। ১৯৪৬ সালে ১৮০০ ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করে ENIAC নামে প্রথম কম্পিউটার তৈরি করা হয়।