যে তরঙ্গ উৎস হতে উৎপন্ন হয়ে সময়ের সাথে সাথে অগ্রসরমান বা চলমান হয় তাকে অগ্রগামী তরঙ্গ বলে। অগ্রগামী তরঙ্গ আড় বা অনুদৈর্ঘ্য এবং লম্বিক বা অনুপ্রস্থ উভয় ধরনের হতে পারে।
অগ্রগামী তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
অগ্রগামী তরঙ্গের নিচের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যথা–
- কোনো মাধ্যমের একই প্রকার কম্পনে এই তরঙ্গের উৎপত্তি হয়।
- এটি একটি সুষম মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দ্রুতি বা বেগে প্রবাহিত হয়।
- অগ্রগামী তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের ঘনত্ব ও স্থিতিস্থাপকতার উপর নির্ভর করে।
- মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পন তরঙ্গ প্রবাহের সাপেক্ষে আড় বা লম্বিক হতে পারে।
- মাধ্যমের কণাগুলো কখনও স্থির থাকে না।
- তরঙ্গ মুখের অবিলম্ব বরাবর শক্তি বহন করে এ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।
- তরঙ্গ প্রবাহে মাধ্যমের বিভিন্ন অংশের চাপ ও ঘনত্বের একই প্রকার পরিবর্তন ঘটে।
- মাধ্যমের প্রতিটি কণার কম্পাঙ্ক ও বিস্তার একই হয় এবং তারা একই ধরনের কম্পনে কম্পিত হয়।
- তরঙ্গ প্রবাহের দরুণ মাধ্যমের কণার দশা পরবর্তী কণাতে স্থানান্তরিত হয়। এরূপ দুটি কণার দশা বৈষম্য তাদের দূরত্বের সমানুপাতিক।
- মাধ্যমের যে কোনো কণার বিভিন্ন ধর্ম— বেগ, ত্বরণ, শক্তি প্রভৃতি একইরূপ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়।
স্থির তরঙ্গ ও অগ্রগামী তরঙ্গের পার্থক্য কি?
স্থির তরঙ্গ ও অগ্রগামী তরঙ্গের পার্থক্য নিম্নরূপ :
অগ্রগামী তরঙ্গ
- অগ্রগামী তরঙ্গে মাধ্যমের সকল কণা পর্যায়বৃত্ত গতি লাভ করে।
- মাধ্যমের কণাগুলো কখনো স্থির অবস্থাপ্রাপ্ত হয় না।
- মাধ্যমের কণাগুলোর বিস্তার সমান কিন্তু দশা বিভিন্ন।
- মাধ্যমের ভিতর দিয়ে নির্দিষ্ট বেগে অগ্রসর হয়।
- মাধ্যমের কণাগুলোকে সরণ, ঘনত্ব, চাপের পরিবর্তন, শক্তি ও বেগের একই রকম পরিবর্তন চক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
- অগ্রগামী তরঙ্গের ক্ষেত্রে পরপর দুটি তরঙ্গশীর্ষের মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং অনুপ্রস্থ তরঙ্গের ক্ষেত্রে একটি সংকোচন ও একটি প্রসারণের মোট দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে।
স্থির তরঙ্গ
- স্থির তরঙ্গে মাধ্যমের নিস্পন্দ বিন্দুর কণাগুলো ছাড়া অন্যান্য সকল কণাই পর্যায়বৃত্ত গতি লাভ করে।
- প্রতিটি পূর্ণ কম্পনে কণাগুলো দুইবার স্থির অবস্থা প্রাপ্ত হয়।
- মাধ্যমের কণাগুলোর দশা সমান, কিন্তু বিস্তার বিভিন্ন।
- মাধ্যমের মধ্যে স্থিরভাবে অবস্থান করে।
- মাধ্যমে কণাগুলো একই রকম পরিবর্তন চক্রের ভিতর দিয়ে যায়।
- পর পর তিনটি নিস্পন্দ বিন্দু বা তিনটি সুস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বকে স্থির তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে।