রেডিও টেলিস্কোপ এক ধরনের দিক নির্দেশী বেতার অ্যান্টেনা যা বেতার জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত হয়। আমাদের মহাবিশ্বে নক্ষত্র, গ্যালাক্সিসমূহ পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত। ঐসব নক্ষত্র বা গ্যালাক্সিগুলো সম্পর্কে আমরা উপাত্ত সংগ্রহ করতে চাই। কিন্তু সব নক্ষত্র বা গ্যালাক্সি আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। কিন্তু এসব মহাজাগতিক বস্তু থেকে নির্গত তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে আমরা নক্ষত্র, সৌরজগত বা মহাবিশ্ব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহৃত এক ধরণের দিকনির্ভর বেতার অ্যান্টেনা, যা একই সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাশূন্য সন্ধানী যান থেকেও উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারে।
মূলনীতি : রেডিও টেলিস্কোপ যে মূলনীতিতে কাজ করে, তাহলো মহাকাশের বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক থেকে তাপীয় নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ ও বিবর্ধন করে তা বিশ্লেষণ করা। এ যন্ত্রের মৌলিক কার্যনীতি দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ব্যবহৃত প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অনুরূপ। আপতিত তরঙ্গ তা বেতার বা দৃশ্যমান যা-ই হোক না কেন, একটি নিখুঁত দর্পণে বাধাগ্রস্থ হয়ে একটি সাধারণ অভিসারী বিন্দুতে মিলিত হয়।
গঠন : রেডিও টেলিস্কোপ মহাশূন্য হতে আগত রেডিও তরঙ্গসমূহকে সনাক্ত করতে পারে। রেডিও টেলিস্কোপ সাধারণ অপটিক্যাল টেলিস্কোপ হতে অনেক বড় আকারের হয়ে থাকে। কারণ হলো, রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তুলনায় বড়। রেডিও টেলিস্কোপের মধ্যে তিনটি প্রধান অংশ থাকে। এগুলো হলো–
(১) রেডিও প্রতিফলক ডিশ-এর কাজ হচ্ছে আপতিত বিকিরণ সংগ্রহ করে একটি বিন্দু অভিসারী করা।
(২) রেডিও বা বেতার এন্টেনা-এটি ফোকাস বিন্দুতে স্থাপন করা হয় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গসমূহকে ধারণ করে।
(৩) রেকর্ডার বা তথ্য প্রদর্শনী যন্ত্র-এর কাজ হলো বিবর্ধিত উপাত্তকে বিজ্ঞানীদের বোধগম্য ভাষায় প্রদর্শন করা।
রেডিও দূরবীক্ষণ যন্ত্র ভূমিতে ও কৃত্রিম উপগ্রহে স্থাপন করা যায়। ভূমিতে স্থাপিত এ যন্ত্রের সাহায্যে মহাজাগতিক উৎস থেকে আগত 1 mm থেকে 10 m তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিও তরঙ্গ সনাক্ত করা যায়। বেতার যন্ত্রগুলো জনবসতি থেকে দূরে স্থাপন করা হয় যাতে বেতার যন্ত্র, টেলিভিশন, রাডার ইত্যাদি তাড়িতচৌম্বক ব্যতিচারের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা যায়।
এখানে যা শিখলাম–
রেডিও টেলিস্কোপ কি?; রেডিও টেলিস্কোপের কাজ কি?; রেডিও টেলিস্কোপের মূলনীতি; রেডিও টেলিস্কোপের গঠন।