মানুষের চলার জন্য যেমন পথের প্রয়োজন, তড়িৎ প্রবাহের জন্যও প্রয়োজন নির্দিষ্ট পথ। তড়িৎ প্রবাহ চলার এই সম্পূর্ণ পথকেই তড়িৎ বর্তনী বলে। যখন তড়িৎ উৎসের দুই প্রান্তকে এক বা একাধিক রোধ, তড়িৎ যন্ত্র বা উপকরণের সাথে যুক্ত করা হয়, তখন একটি তড়িৎ বর্তনী তৈরি হয়। একটি চাবি বা সুইচের সাহায্যে বর্তনী বন্ধ করা বা খোলা যায়। বর্তনী বন্ধ থাকলে তড়িৎ প্রবাহিত হবে, খোলা থাকলে তড়িৎ প্রবাহিত হবে না।
সাধারণত বর্তনীতে তড়িৎযন্ত্র ও উপকরণসমূহ দু’ভাবে সংযুক্ত করা হয়। এগুলো হলোঃ
(ক) শ্রেণিসংযোগ বর্তনী এবং (খ) সমান্তরাল সংযোগ বর্তনী
(ক) শ্রেণি সংযোগ বর্তনী
কোনো বর্তনীতে যদি রোধ, তড়িৎযন্ত্র বা উপকরণসমূহ এমনভাবে সংযুক্ত হয় যেন প্রথমটির এক প্রান্তের সাথে দ্বিতীয়টির অন্য প্রান্ত, দ্বিতীয়টির অপর প্রান্তের সাথে তৃতীয়টির এক প্রান্ত এবং এরূপে সব কয়টি পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে, তবে সেই সংযোগকে অনুক্রম বা শ্রেণিসংযোগ বলে।
(খ) সমান্তরাল সংযোগ বর্তনী
কোনো বর্তনীতে দুই বা ততোধিক রোধ, তড়িৎ উপকরণ বা যন্ত্র যদি এমনভাবে সংযুক্ত থাকে যে সব কয়টির এক প্রান্ত একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং অপর প্রান্তগুলো অপর একটি সাধারণ বিন্দুতে সংযুক্ত হয় তবে সেই সংযোগকে সমান্তরাল সংযোগ বলে। সমান্তরাল সংযোগে প্রত্যেকটির মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তড়িৎ প্রবাহ চলে কিন্তু প্রত্যেকটির দুই সাধারণ বিন্দুর বিভব পার্থক্য একই থাকে।
তড়িৎ বর্তনী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকণিকাঃ
১। তড়িৎ প্রবাহ চলার সম্পূর্ণ পথকে বলা হয়— তড়িৎ বর্তনী।
২। বর্তনীর দুইপ্রান্ত সংযুক্ত থাকে তড়িৎ কোষের— ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তে।
৩। সাধারণত বর্তনীতে তড়িৎযন্ত্র ও উপকরণসমূহ সংযুক্ত করা হয়— দুইভাবে।
৪। তড়িৎ প্রবাহ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়— অ্যামিটার।
৫। অ্যামিটারকে বর্তনীর সাথে সংযুক্ত করা হয়— শ্রেণি সমবায়ে।
৬। বর্তনীতে ভোল্টমিটার সংযুক্ত করা হয়— সমান্তরালে।
৭। সমান্তরাল সংযোগে প্রতিটি রোধের জন্য একই থাকে— বিভব পার্থক্য।
৮। প্রতিটি বাল্ব পৃথক পৃথকভাবে জ্বালানো বা নিভানো যাবে— সমান্তরাল সংযোগ।
৯। প্রতিটি বাল্বের বিভব পার্থক্য সমান থাকবে— সমান্তরাল সমবায়ে।
১০। গৃহে বিদ্যুতায়নের জন্য সুবিধাজনক— সমান্তরাল সমবায়।