পৃষ্ঠটান কি? পৃষ্ঠটানের একক কি? পৃষ্ঠটানের ব্যবহার।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পৃষ্ঠটান হচ্ছে তরল পদার্থের একটি ধর্ম। কোনো তরল পৃষ্ঠের উপর যদি একটি রেখা কল্পনা করা হয় তবে ঐ রেখার প্রতি একক দৈর্ঘ্যে রেখার সাথে লম্বভাবে এবং পৃষ্ঠের স্পর্শকরূপে রেখার উভয় পাশে যে বল ক্রিয়া করে তাকে ঐ তরলের পৃষ্ঠটান বলে। পৃষ্ঠটানের জন্যই কিছু কীট, যাদের দেহের ঘনত্ব জল অপেক্ষা অনেক বেশি, তারা জলের উপরিতলে ভাসমান থাকতে পারে আর হেঁটে যেতে পারে।
পৃষ্ঠটানকে সাধারণত γ (গ্রিক অক্ষর গামা) চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং এর পরিমাপ হয় ‘বল প্রতি একক দৈর্ঘ্য’ দিয়ে। এর এসআই একক হল নিউটন প্রতি মিটার, তবে সিজিএস পদ্ধতিতে ডাইন প্রতি সেমি এককটিও ব্যবহার করা হয়।

পৃষ্ঠটানের ব্যবহার (Use of Surface Tension)
দৈনন্দিন জীবনের কতগুলো বাস্তব ঘটনা যা পৃষ্ঠটান দ্বারা প্রভাবিত হয়। তরলের পৃষ্ঠটানের সাহায্যে এই সকল ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায়।

১. পানির তলে পোকামাকড়ের চলাচল : আমরা পানির উপরিতলে পোকামাকড় চলাফেরা করতে দেখি। এই পোকামাকড় পানির মধ্যে ডুবে না কেন? এর কারণ কিন্তু পৃষ্ঠটান। আমরা জানি পৃষ্ঠটান নানা কারণে প্রভাবিত হয়— এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো পৃষ্ঠটানজিনত পানির ঊর্ধ্বমুখী বল। পোকামাকড় যখন পানির উপর দিয়ে চলাচল করে তখন এর ওজন (W) নিচের দিকে ক্রিয়াশীল হয়, অপরদিকে পোকামাকড়ের উপর পৃষ্ঠটানজনিত উর্ধ্বমুখী বল (F) উপরের দিকে ক্রিয়াশীল হয়। পৃষ্ঠটানের দরুন পানির উপরিতল নিচের দিকে বেঁকে যায়। এ ঊর্ধ্বমুখী বল (F) এবং ওজন (W) এর মান সমান হওয়ার কারণেই পোকামাকড় পানির উপরে ভেসে থেকে চলাচল করতে পারে।

২. সাবানের ফেনা : ফাঁপা একটি কাঁচনলের একপ্রান্ত সাবান পানিতে ডুবিয়ে ফুঁ দিলে সাবানের গোলাকার বুদ্বুদ্ সৃষ্টি হয়। অথবা কাপড় কাচার সময় কাপড়ে সাবান পানি লেগে থাকলে যেখানেও সাবানের বুদবুদ সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সাবান পানির পাতলা ও গোলাকার পর্দা দ্বারা আবদ্ধ কিছু পরিমাণ বায়ু থেকে সাবানের বুদবুদ ওঠে। এই সাবান বুদবুদের দুটি পৃষ্ঠ থাকে, একটি ভেতরের পৃষ্ঠ, অপরটি বাইরের পৃষ্ঠ। ভেতরের চাপ বাইরের চাপ অপেক্ষা বেশি বলে বুদবুদ প্রসারিত হতে চায়। কিন্তু পর্দার পৃষ্ঠটান একে সঙ্কুচিত করতে চায়। বুদবুদের সাম্যাবস্থায় এই দুটি বিপরীতমুখী বলের মান সমান হয়। পৃষ্ঠটান অপেক্ষা ভেতরের চাপ বেশি হলে তা ফেটে যাবে।

৩. গাছে পানির পরিবহন : গাছে পানির পরিবহন ব্যাখ্যা করার আগে আমরা কৈশিক নল ও কৈশিকতা কী তা বোঝার চেষ্টা করব। কৈশিক নল হলো সুষম, সূক্ষ্ম ছিদ্রবিশিষ্ট সরু নল। আর কৈশিকতা বলতে এই নলের মধ্যে তরলের ঊর্ধ্বারোহণ বা অবনমনকে বোঝায়। গাছের মূল থেকে শুরু করে কাণ্ড ও শাখা প্রশাখাতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। এই সকল ছিদ্ৰ কৈশিক নল হিসেবে ক্রিয়া করে। ফলে মাটি থেকে পানি বা জলীয় অংশ এই সরু ছিদ্র পথে কৈশিকতার কারণে মূল থেকে কাণ্ড ও গাছের অন্যান্য অংশে পানির পরিবহন হয় বা পানি ছড়িয়ে পড়ে।

৪. তরলের পৃষ্ঠে সূঁচের অবস্থান : পানির উপরিতলে একটি পাতলা কাগজ রেখে তার উপর গ্রিজ মাখানো একটি সূঁচ স্থাপন করলে দেখা যাবে যে, কাগজ পানিতে ডুবে গেছে, কিন্তু সূঁচ পানিতে ভাসছে, তবে পানির তল নিচের দিকে কিছু বেঁকে গেছে। তরলে পৃষ্ঠটান (T) এর দরুন সূঁচের উপর মোট ঊর্ধ্বমুখী বল (F) সূচের ওজন (W) এর সমান হয় অর্থাৎ F = W হয় এই কারণে সূঁচকে পানিতে ভাসতে দেখা যায়।