এন্ট্রপি হচ্ছে বস্তুর একটি ভৌত ধর্ম। তাপগতিবিজ্ঞানে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি তাপগতীয় রাশিসমূহের এমন একটি অপেক্ষক, যা তাপ প্রবাহের দিক বা তাপ সঞ্চালনের দিক নির্দেশ করে এবং তাপগতীয় অবস্থা নির্ধারণে সহায়তা করে। ইহা বস্তুর একটা ভৌত গুণ। একে তাপীয় জড়তা বলে। এন্ট্রপি একটি পরিমেয় রাশি। কোনো সিস্টেমের এন্ট্রপি কত পরিবর্তন হলো তা নির্ণয় করা যায়।
তাপমাত্রা, তাপমাত্রা ও চাপের মতো বস্তুর এন্ট্রপিও একটি প্রাকৃতিক রাশি। এর মান বস্তুর বর্তমান অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে কোন পথে বস্তু ঐ অবস্থায় পৌঁছল তার উপর নির্ভর করে না অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট অবস্থায় বস্তুর এন্ট্রপি বস্তুর পূর্ব ইতিহাসের উপর নির্ভর করে না। তাপ গ্রহণে বা বর্জনে বস্তুর এন্ট্রপি পরিবর্তিত হয়।
কোনো একটি সংস্থা বা চক্রের তাপমাত্রা সাপেক্ষে গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিবর্তনের হার দ্বারা এন্ট্রপি পরিমাপ করা হয়।
এন্ট্রপির তাৎপর্য (Significant of entropy)
তাপগতিবিদ্যায় এট্রপির গুরুত্ব অপরিসীম। এর নিম্নলিখিত তাৎপর্য রয়েছে :
১। এন্ট্রপি একটি প্রাকৃতিক রাশি যার মান তাপ ও পরম তাপমাত্রার অনুপাতের সমান।
২। এটি বস্তুর একটি তাপীয় ধর্ম যা তাপ সঞ্চালনের দিক নির্দেশ করে।
৩। এটি বস্তুর তাপগতীয় অবস্থা নির্ধারণে সহায়তা করে।
৪। এটি তাপমাত্রা, চাপ, আয়তন, অন্তর্নিহিত শক্তি, চুম্বকীয় অবস্থার ন্যায় কোনো বস্তুর অবস্থা প্রকাশ করে।
৫। এন্ট্রপি বৃদ্ধি পেলে বস্তু শৃঙ্খল অবস্থা (ordered state) হতে বিশৃঙ্খল অবস্থায় (disordered state) পরিণত হয়।
৬। তাপমাত্রা ও চাপের ন্যায় একে অনুভব করা যায় না।
এ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ–
১। জগতের তাপীয় মৃত্যু কি?
উত্তর : প্রকৃতিতে সবকিছুই সাম্যাবস্থা পেতে চেষ্টা করে। একটি সিস্টেম যতই সাম্যাবস্থার দিকে এগিয়ে যায় ততই তার কাছ থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, সাম্যাবস্থায় পৌঁছলে সিস্টেম থেকে আর কোনো কাজই পাওয়া যাবে না। সিস্টেমের এই শক্তির রূপান্তরের অক্ষমতা বা অসম্ভাব্যতাই হচ্ছে এনট্রপি। এক বা একাধিক সিস্টেম যত সাম্যাবস্থার দিকে এগিয়ে যায় তাদের এনট্রপিও তত বাড়তে থাকে। সাম্যাবস্থায় এনট্রপি সবচেয়ে বেশি হয়। যেহেতু প্রকৃতিতে সবকিছুই সাম্যাবস্থা পেতে চায়, তাই বলা যায় যে, জগতে এনট্রপি ক্রমাগত বাড়ছে। জগতের এনট্রপি যখন সর্বোচ্চে পৌছাবে তখন সব কিছুর তাপমাত্রা এক হয়ে যাবে। ফলে তাপশক্তিকে আর যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা যাবে না। এই অবস্থাকে জগতের তথাকথিত তাপীয় মৃত্যু (Heat death of the universe) নামে অভিহিত করা হয়েছে।