মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য আমরা যেসব কথা বলি, তাকে ভাষা বলে। যেমন– আমার নাম মিনা। আমি বই পড়ি। সে স্কুলে যায় ইত্যাদি।
ভাষার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of language)
ভাষার বিশেষ কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। ভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ
(১) ভাষা মনের ভাব প্রকাশ করে।
(২) ভাষা এক ধরনের ধ্বনি।
(৩) এই ধ্বনি মানুষের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়।
(৪) ধ্বনিগুলো অর্থযুক্ত হয়।
(৫) ধ্বনি তৈরি শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয়।
(৬) কোনো এক অঞ্চলে মানুষ তা ব্যবহার করে বা করত।
(৭) ভাষা তার নিজস্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম।
ভাষা কত প্রকার ও কি কি?
ভাষা প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ (ক) কথ্য ভাষা বা মুখের ভাষা ও (খ) লেখ্য ভাষা বা লিখিত ভাষা।
(ক) কথ্য বা মৌখিক ভাষা
সাধারণত আমরা যে ভাষায় কথা বলে পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বলে পরস্পরের ভাব আদান-প্রদান করি, তাকে কথ্য বা মৌখিক ভাষা বলে। কথ্য ভাষা দুই প্রকার। যথা- ক. আঞ্চলিক ভাষা ও খ. সর্বজনীন ভাষা।
(খ) লেখ্য ভাষা বা লিখিত ভাষা
যে ভাষায় বই-পুস্তক, চিঠি-পত্র ইত্যাদি লেখা হয় তাকে লেখ্য ভাষা বা লিখিত ভাষা বলে। লেখ্য ভাষা বা লিখিত ভাষা দুই প্রকার। যথাঃ (ক) সাধু ভাষা ও (খ) চলিত ভাষা।
সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য
এটা শুধু লেখ্য ভাষারূপে প্রচলিত।
সাধু ভাষার উচ্চারণ গুরুগম্ভীর।
সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়।
সাধু ভাষায় সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়।
সাধু ভাষা কথাবার্তা, নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার উপযোগী নয়।
সাধু ভাষা ব্যাকরণের নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলে।
কথ্য ভাষা বা মুখের ভাষা আবার দুই প্রকার। যথাঃ (ক) আঞ্চলিক ভাষা ও (খ) সর্বজনীন ভাষা।
আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য
আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ-
১. আঞ্চলিক ভাষা বিশেষ অঞ্চলের মানুষের পরিচয়ের মূল সূত্র।
২. আঞ্চলিক ভাষা পরিবর্তনশীল।
৩. আঞ্চলিক ভাষা বাংলাদেশের লোক-সংস্কৃতির সম্পদ।
৪. আঞ্চলিক ভাষার রূপ অকৃত্রিম।
৫. বাংলাদেশের অঞ্চল বিশেষের ভাষার বৈচিত্র্যই বাংলা ভাষাকে প্রাণশক্তি দান করেছে।
৬. আঞ্চলিক ভাষা গণসাহিত্য সৃষ্টির উপযোগী।
৭. আঞ্চলিক ভাষা ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম মেনে চলে না।
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য কি?
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য নিম্নরূপঃ–
সাধু ভাষা
- সাধু ভাষা ব্যাকরণের নিয়মে নির্দিষ্ট তাই অপরিবর্তনীয়।
- এই ভাষার পদবিন্যাস ব্যাকরণ দ্বারা নির্দিষ্ট তাই সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
- বহু তৎসম শব্দে সাধু ভাষা পূর্ণ, তাই কিছুটা কঠিন ও গুরুগম্ভীর।
- শব্দসমূহের রূপ কিছুটা দীর্ঘ ও বিস্তারিত।
- কবিতা, নাটক ও বক্তৃতায় সাধু ভাষা অনুপযোগী।
- সাধু ভাষা কথ্যরূপে ব্যবহারের অনুপযোগী এবং কৃত্রিম রূপে গঠিত।
চলিত ভাষা
- চলিত ভাষা ব্যাকরণ দ্বারা নির্দিষ্ট নয়, তাই পরিবর্তনশীল।
- এই ভাষা ব্যাকরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তাই পদবিন্যাস ততটা সুনির্দিষ্ট বা অপরিবর্তনীয় নয়।
- বহু তদ্ভব শব্দে চলিত ভাষা পূর্ণ, তাই কিছুটা গম্ভীর্যহীন, হালকা, সহজ ও সরল।
- শব্দসমূহের রূপ (সাধু ভাষার শব্দের তুলনায়) অপেক্ষাকৃত হ্রস্ব ও সংক্ষিপ্ত।
- কবিতা, নাটক ও বক্তৃতায় চলিত ভাষা অত্যন্ত উপযোগী।
- চলিত ভাষা কথ্যরূপে ব্যবহূত, তাই মোটামুটি স্বাভাবিক ও অনেকটা কৃত্রিমতাশূন্য।