সার শব্দের অর্থ হলো ‘মূল’। আর ‘মর্ম’ অর্থ তাৎপর্য। অর্থাৎ সারমর্ম হলো কোনো ব্যাখ্যামূলক তাৎপর্য। মোটকথা হলো কোনো বিস্তারিত বর্ণনা থেকে ব্যাখ্যামূলক কথাগুলো বাদ দিয়ে শুধু ‘সার’ বা মূল কথাটি সংক্ষেপে উপস্থাপনাকে সারমর্ম বলে।
সারমর্ম লেখার নিয়মাবলী
১) অপ্রধান ভাবগুলো উল্লেখিত হলে সারসংক্ষেপ ত্রুটিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। সারসংক্ষেপে মূল ভাবটিকে সরল ও সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়।
২) সারমর্মের আয়তন ঠিক কতটা হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। সাধারণত মূলের অর্ধাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। ফলে শব্দসংখ্যা গণনা সারসংক্ষেপের ক্ষেত্রে আবশ্যিক প্রয়োজন। মূলের শব্দ সংখ্যা এবং সংক্ষেপিত অংশের শব্দসংখ্যা উল্লেখ করতে হবে।
সারমর্মকে অনেকে ইংরেজি Precis বলে মনে করে থাকেন। Precis রচনায় শীর্ষনাম দেয়ার রীতি রয়েছে। কিন্তু সারমর্মের শীর্ষনাম দেবার প্রয়োজন নেই। দিলে তা অনাবশ্যক বলে বিবেচিত হবে। অবশ্য প্রশ্নপত্রে শীর্ষনাম চাওয়া হলে তখন তা অবশ্যই দিতে হবে।
সাধারণত সারাংশ বা সারমর্ম বলতে বোঝায় সংক্ষেপন। সারাংশ অর্থ সারকথা। সারাংশ লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে, মূল ভাবার্থ যেন বাদ পড়ে না যায়। গদ্যাংশ বা পদ্যাংশের কোনো অনুচ্ছেদের সারাংশ লিখতে হলে গদ্যাংশ বা কবিতাংশটি পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পড়ে ভাল করে বুঝে নিতে হবে লেখক কিংবা কবির বক্তব্য কী। শাব্দিক অর্থ, ছন্দ, উপমা প্রভৃতি থেকে আলাদা করে নিতে হবে মূল বক্তব্যটিকে।
সারমর্ম ও সারাংশের মাঝে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সারমর্ম লেখার ক্ষেত্রে মূল বক্তব্য লিখতে হয়। আর সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে মূল ভাবকে উপস্থাপিত করতে হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে সারমর্ম সারাংশের চেয়ে ছোট হয়।
৩) সারমর্মের মূলের ভাষাকে হুবহু অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয় নয়। দেখা যায়, অনেক ছাত্র-ছাত্রী উদ্ধৃত অংশটির বাক্য বা বাক্যাংশ সংযোজন ও সংকোচন করে সারমর্ম রচনা করে। মূলের বাক্যাংশ সংযোজিত করে বা সংকোচিত করে সারমর্ম রচনা করা অনুচিত। ভাষাকে যতটা সম্ভব স্বকৃত ও সরল করা প্রয়োজন।
৪) মূল অনুচ্ছেদটি বারবার পাঠ করে তার ভাবটি অনুধাবন করতে পারলেই সারমর্ম করা ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে সহজ হবে।
৫) সারমর্ম মূল ভাবটিকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয় বলে ভাষাকে পল্লবিত করার কোনো সুযোগ নেই। অপ্রয়োজনীয় শব্দ, উপমা, রূপক প্রভৃতি অলঙ্কার বা দৃষ্টান্ত সারমর্মে ব্যবহার করা অবশ্যই বর্জনীয়।