প্রশ্ন-১। মিশ্রণ কাকে বলে?
উত্তরঃ দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোন অনুপাতে মেশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে তবে সেই সমাবেশকে মিশ্রণ বলে।
প্রশ্ন-২। মিশ্রণ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ মিশ্রণ দুই প্রকার যথা: ১) সমসত্ত্ব মিশ্রণ এবং ২) অসমসত্ত্ব মিশ্রণ।
প্রশ্ন-৩। সমসত্ত্ব মিশ্রণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে মিশ্রণের সকল অংশে উপাদনসমূহ একই অনুপাতে বিদ্যমান এবং একাধিক উপাদানের উপস্থিতি বোঝা যায় না তাকে সমসত্ত্ব মিশ্রণ বলে। যেমন– চিনির শরবত একটি সমসত্ত্ব মিশ্রণ।
প্রশ্ন-৪। অসমসত্ত্ব মিশ্রণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে মিশ্রণের বিভিন্ন অংশে তার উপাদানসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে থাকে এবং একাধিক উপাদানের উপস্থিতি বোঝা যায় তাকে অসমসত্ত্ব মিশ্রণ বলে।
প্রশ্ন-৫। দ্রবণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসব মিশ্রণে উপাদানগুলো সুষমভাবে বণ্টিত থাকে এবং একটি উপাদান থেকে আরেকটিকে সহজে আলাদা করা যায় না তাদেরকে দ্রবণ বলে। দ্রবণ দুই প্রকার। ঘনমাত্রার ওপর নির্ভর করে দ্রবণকে পাতলা বা ঘন বলা হয়।
প্রশ্ন-৬। দ্রবণ ও মিশ্রণের মধ্যে মূল পার্থক্য কি?
উত্তরঃ দ্রবণ ও মিশ্রণের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো দ্রবণের উপাদানগুলোকে একটি থেকে আরেকটিকে সহজে আলাদা করা যায় না। অপরদিকে মিশ্রণের উপাদানগুলোকে একটি থেকে আরেকটিকে সহজেই আলাদা করা যায়।
প্রশ্ন-৭। দ্রবণীয়তা কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম দ্রাবক নিয়ে কোনো দ্রবের সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করতে যতটুকু দ্রবের প্রয়োজন হয়, তাকেই ঐ দ্রাবকে ঐ দ্রবের দ্রবণীয়তা বলে। যেমন– ২৫°C তাপমাত্রায় পানিতে চিনির দ্রবণীয়তা হলো ২১১.৪। অর্থাৎ এই তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম পানি সর্বোচ্চ ২১১.৪ গ্রাম চিনি দ্রবীভূত করতে পারে।
প্রশ্ন-৮। তরল-গ্যাস দ্রবণ বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ যে দ্রবণে দ্রাবক হলো তরল পদার্থ আর দ্রব হলো গ্যাসীয় পদার্থ তাকে তরল-গ্যাস দ্রবণ বলে। যেমন কোমল পানীয় কোকাকোলা, সেভেন আপ ইত্যাদি। এসব কোমল পানীয়ের বোতল খোলার সাথে সাথে হিসস্ শব্দ করে বুদবুদ আকারে গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়। এ গ্যাসীয় পদার্থটি হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড, যা পানীয়ের মধ্যে দ্রবীভূত অবস্থায় দ্রব হিসেবে ছিল। অর্থাৎ কোমল পানীয়গুলোকে আমরা তরল-গ্যাস দ্রবণ বলতে পারি।
প্রশ্ন-৯। সাসপেনশন কাকে বলে?
উত্তরঃ যে মিশ্রণ রেখে দিলে এর উপাদানসমূহ আংশিকভাবে আলাদা হয়ে যায় তাকে সাসপেনশন বলে। যেমন, চক মিহি করে গুঁড়া করে পানিতে যোগ করে ভালোভাবে নাড়া দেওয়ার পর কিছুক্ষণ রেখে দিলে যে মিশ্রণ পাওয়া যায় সেগুলো সাসপেনশন।
প্রশ্ন-১০। চুনের পানি সাসপেনশন কেন?
উত্তরঃ সাসপেনশন হলো এমন এক ধরণের দ্রবণ যেখানে কঠিন দ্রব পদার্থটি তরল দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় না। চুনে পানি যোগ করলে উৎপন্ন চুনের পানিতে চুন অদ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। তাই চুনের পানিকে সাসপেনশন বলা হয়।
সাসপেনশন এবং কলয়েড মিশ্রণ কী একই?
উত্তরঃ সাসপেনশন জাতীয় অসমসত্ত্ব মিশ্রণে কণার আকার এমন হয় যে, সময়ের সাথে সাথে মিশ্রণের কণাগুলাে (স্থির থাকলে) তলানিরুপে পতিত হয় যাকে sedimentation বলে। কিন্তু কলয়েড জাতীয় মিশ্রণে, কলয়েড কণাগুলাে এরূপ পতনে অংশ নেয় না বরং সব সময়ই মিশ্রণে তরল/গ্যাস দশায় ভাসমান (suspended) অবস্থায় থাকে। সুতরাং সাসপেনশন ও কলয়েড আসলে আলাদা দুধরনের মিশ্রণ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : ঔষধ খাওয়ানোর সময় আদিল প্রতিবারই লক্ষ করে মা ঔষধের বোতল ঝাঁকিয়ে নেন। কিন্তু দুধ খাওয়ানোর সময় ঝাঁকান না।
ক. অসমস্বত্ব মিশ্রণ কী?
খ. দ্রবণীয়তা বলতে কী বোঝায়?
গ. ঔষধের বোতল আদিলের মা কেন ঝাঁকিয়ে নেন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মিশ্রণ দুটি কি একই? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব মিশ্রণে উপাদানগুলো সুষম অনুপাতে থাকে না এবং একটি উপাদান থেকে আরেকটি উপাদান সহজে আলাদা করা যায় সেসব মিশ্রণই হলো অসমস্বত্ব মিশ্রণ।
খ. কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম দ্রাবক (যেমন- পানি) নিয়ে কোনো দ্রবের (যেমন- লবণ) সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করতে যতটুকু দ্রবের প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ দ্রাবকে দ্রবের দ্রবণীয়তা বলে। যেমন— ২৫°C তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম পানিতে সর্বোচ্চ ৩৬ গ্রাম লবণ দ্রবীভূত হতে পারে। অতএব, ২৫°C তাপমাত্রায় পানিতে লবণের দ্রবণীয়তা ৩৬ গ্রাম।
গ. উদ্দীপকের ঔষধটি ছিল একটি সাসপেনসন। এটি এক ধরনের মিশ্রণ যা অনেকক্ষণ যাবৎ রেখে দিলে উপাদানসমূহ আংশিকভাবে আলাদা হয়ে যায় ও বোতলের নিচে তলানি পড়ে যায়। এ অবস্থায় বোতলে থাকা ঔষধ পান করলে তা সঠিকভাবে কাজ করে না। তাই, ঔষধ সেবনের পূর্বে উপাদানগুলোকে সুষমভাবে মিশিয়ে নেওয়ার জন্যই আদিলের মা ঔষধের বোতল ঝাঁকিয়ে নেন।
ঘ. ঔষধ হলো সাসপেনসন কিন্তু দুধ হলো কলয়েড। তাই মিশ্রণ দুটি এক নয়। সাসপেনসন হলো এমন এক ধরনের মিশ্রণ যা অনেকক্ষণ যাবৎ রেখে দিলে উপাদানসমূহ আংশিকভাবে আলাদা হয়ে যায়। তাই ঔষধের বোতল রেখে দিলে অনেকক্ষণ পর এর উপাদানসমূহ পৃথক হয়ে বোতলের নিচে তলানি হিসেবে পড়ে।
সাসপেনসনের কণাগুলোর আকার ১ মাইক্রোমিটার বা তার বেশি হয়। তাই কণাগুলো দ্রুত তলানি না পড়লেও অনেকক্ষণ পরে তলানি পড়ে। অপরদিকে, কলয়েড হলো এমন এক ধরনের মিশ্রণ, যেখানে অতিক্ষুদ্র কোনো বস্তুকণা অপর বস্তুকণার মাঝে ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং রেখে দিলে কখনই কোনো তলানি পড়ে না। দুধ হলো পানি ও চর্বির কলয়েড।
যেখানে চর্বির কণাগুলো পানিতে দ্রবীভূত না হয়ে ছড়িয়ে থাকে। দুধে পানির পরিমাণ বেশি বলে এটিকে অবিচ্ছিন্ন ফেজ বা দশা এবং চর্বির পরিমাণ কম বলে এটিকে ডিসপারসড ফেজ বা দশা বলে। এক্ষেত্রে ভাসমান কণাগুলোর আকার ১-১০০০ ন্যানোমিটার হয়ে থাকে। তাই, দুধ ও ঔষধ মিশ্রণ দুটি এক নয়।