দশম অধ্যায় : আদর্শ গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব
প্রশ্ন-১। আদর্শ গ্যাস কাকে বলে?
উত্তর : যে সকল গ্যাস সকল তাপমাত্রা ও চাপে বয়েল ও চার্লসের সূত্র মেনে চলে, তাদেরকে আদর্শ গ্যাস বলে।
প্রশ্ন-২। গ্যাসের গতিতত্ত্ব কী?
উত্তরঃ বায়বীয় পদার্থের আচরণের নিয়মগুলো পেতে যে তত্ত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সেই তত্ত্বই গ্যাসের গতিতত্ত্ব নামে পরিচিত।
প্রশ্ন-৩। মৌলিক স্বীকার্য কী?
উত্তর : গ্যাসের অণুর গতিতত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কতকগুলো পূর্ব শর্তকে গ্যাসের মৌলিক স্বীকার্য বলে।
প্রশ্ন-৪। গড় বেগ কাকে বলে?
উত্তর : গ্যাসের অণুর বেগ শূন্য থেকে শুরু করে অসীম পর্যন্ত বিভিন্ন মানের হয়ে থাকে। এদের বেগের গড় মানকে গড় বেগ বলে।
প্রশ্ন-৫। কুয়াশা কী?
উত্তর : বিস্তীর্ণ এলাকায় সমবেতভাবে ভাসমান পানি কণাগুলোকে কুয়াশা বলে।
প্রশ্ন-৬। শিশির কী?
উত্তর : তাপমাত্রা যখন শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে আসে তখন বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের অতিরিক্ত বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি বিন্দুতে পরিণত হয় একে শিশির বলে।
প্রশ্ন-৭। বাষ্পায়ন কাকে বলে?
উত্তর : যে কোনো তাপমাত্রায় কেবল তরল পদার্থের উপরিতল থেকে তরল ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে বাষ্পায়ন বলে।
প্রশ্ন-৮। কখন সকল গ্যাসই আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করে?
উত্তরঃ উচ্চ তাপমাত্রা ও নিম্নচাপে।
প্রশ্ন-৯। প্রমাণ চাপ বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ সমুদ্রপৃষ্ঠে 45° অক্ষাংশে 0°C তাপমাত্রায় 760 mm বিশুদ্ধ পারদ স্তম্ভের চাপকে প্রমাণ চাপ বলা হয়।
প্রশ্ন-১০। আর্দ্রতা কাকে বলে?
উত্তরঃ কোন স্থানের বায়ুতে কতটুকু জলীয় বাষ্প আছে অর্থাৎ বায়ু কতটুকু শুষ্ক বা ভেজা তার নির্দেশককে বায়ুর আর্দ্রতা বলে।
প্রশ্ন-১১। মূল গড় বর্গবেগ কী?
উত্তরঃ গ্যাস অণুগুলোর বেগের বর্গের গড়মানের বর্গমূলকে মূল গড় বর্গবেগ বলে।
প্রশ্ন-১২। শিশিরাংক কী?
উত্তরঃ যে তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ু এর ভিতরের জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয় তাকে শিশিরাংক বলে।
প্রশ্ন-১৩। গড়মুক্ত পথ কি?
উত্তরঃ পরপর দুটি সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সময়ে একটি অণু যে গড় দূরত্ব অতিক্রম করে তাই গড় মুক্ত পথ।
প্রশ্ন-১৪। আপেক্ষিক আর্দ্রতা কী?
উত্তরঃ কোন স্থানে নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভর ও বায়ুর তাপমাত্রায় ঐ আয়তনের বায়ুর সম্পৃক্ত জলীয় বাষ্পের ভরের অনুপাতকে ঐ স্থানের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।
প্রশ্ন-১৫। সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক কাকে বলে? এর মান কত?
উত্তরঃ যেকোনো আদর্শ গ্যাসের এক মোলের জন্য চাপ ও আয়তনের গুণফলকে তাপমাত্রা দ্বারা ভাগ করলে একটি ধ্রুব সংখ্যা পাওয়া যায়। এ ধ্রুব সংখ্যাকে সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বলে। এর মান 8.31 J⋅mol−1k−1।
প্রশ্ন-১৬। হাইগ্রোমিটার কাকে বলে?
উত্তরঃ যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় তাকে হাইগ্রোমিটার বলে।
প্রশ্ন-১৭। স্বাধীনতার মাত্রা কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো গতিশীল সিস্টেমের অবস্থান সম্পূর্ণরূপে বোঝাতে মোট যে সংখ্যক স্বাধীন রাশির প্রয়োজন হয় তাকে স্বাধীনতার মাত্রা বলে।
প্রশ্ন-১৮। নিউটনের শীতলীকরণ সূত্রটি বর্ণনা করো।
উত্তর : বস্তু ও পারিপার্শ্বিকের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হলে বস্তু যে হারে তাপ হারায় তা বস্তু ও পারিপার্শ্বিকের তাপমাত্রার পার্থক্যের সমানুপাতিক।
প্রশ্ন-১৯। মূল গড় বর্গবেগ কী?
উত্তর : কোনো গ্যাসের সকল অণুর বেগের বর্গের গড়মানের বর্গমূলকে মূল গড় বর্গবেগ বলে।
প্রশ্ন-২০। সম্পৃক্ত বাষ্প চাপ কী?
উত্তরঃ কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আবদ্ধ স্থানের বাষ্প যে সর্বাধিক চাপ প্রয়োগ করে তাকে সম্পৃক্ত বাষ্প চাপ বলে।
প্রশ্ন-২১। অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপ কী?
উত্তরঃ কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আবদ্ধ স্থানের বাষ্প যদি সর্বাধিক বাষ্পচাপ অপেক্ষা কম চাপ প্রয়োগ করে তবে তাকে অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপ বলে।
একই তাপমাত্রায় ঢাকা অপেক্ষা কক্সবাজারে বেশি অস্বস্তিবোধ হয় কেন?
উত্তরঃ কক্সবাজার সমুদ্রতীরবর্তী বলে সেখানে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি। ঢাকা অপেক্ষাকৃত দূরে হওয়ায় সেখানকার আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম।
আমরা জানি, বায়ুমন্ডলের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বাষ্পায়নের হার কমে যায়। ফলে ঢাকায় শরীর থেকে নির্গত ঘাম দ্রুত শুকাবে এবং শরীর থেকে বেশি সুপ্ততাপ গ্রহণ করবে। ফলে দেহ শীতল বোধ হয় ও স্বস্তি লাগে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে শরীর থেকে নির্গত ঘাম কম শুকাবে ও বাষ্পায়নের জন্য কম সুপ্ততাপ প্রয়োজন হবে।
ফলে ঢাকা অপেক্ষা কক্সবাজারে বেশি অস্বস্তিবোধ হয়।
বর্ষাকাল অপেক্ষা শীতকালে ভেজা কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায় কেন?
উত্তরঃ শীতকালে তাপমাত্রা বর্ষাকাল অপেক্ষা কম হওয়া সত্ত্বেও বাষ্পায়ন দ্রুত হয় বলে তাড়াতাড়ি কাপড় শুকায়। বাষ্পায়ন নির্ভর করে আপেক্ষিক আর্দ্রতার উপর। বর্ষাকালে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকে। শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে। এ কারণে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকে বলে ভেজা কাপড়া থেকে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়।
ফলে কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায়।
মরু অঞ্চলে দিনে গরম ও রাতে প্রচন্ড শীত বোধ হয় কেন?
উত্তরঃ মরু অঞ্চলের বায়ু শুষ্ক থাকে। শুষ্ক বায়ু উত্তম তাপ পরিবাহী মাধ্যম অর্থাৎ শুষ্ক বায়ুর মধ্য দিয়ে তাপ সহজে যেতে পারে। দিনের বেলা সূর্যের তাপ সহজেই ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায় ও ভূ-পৃষ্ঠ অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়। ফলে মরু অঞ্চলে দিনে প্রচন্ড গরম বোধ হয়।
আবার রাতের বেলায় ভূ-পৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে। শুষ্ক বায়ুর মধ্য দিয়ে সহজেই তাপ বায়ুমন্ডল ভেদ করে চলে যায়। ফলে ভূ-পৃষ্ঠ শীতল হয়ে যায়। তাই রাতের বেলা সেখানে খুব শীত অনুভূত হয়।