নিজের সামর্থ্য কাকে বলে?
উত্তরঃ উদ্যোক্তা যখন অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিজে ঝুঁকি গ্রহণ করে, ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করে তখন তাকে নিজের সামর্থ্য বলে।
সম আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সম আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ ব্যবসায়ের এমন একটি অবস্থা, যেখানে প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় সমান হয়।
এ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, কী পরিমাণ পণ্য বিক্রি করলে ব্যবসায়ে লোকসান হবে না। এছাড়া এ বিন্দু বিশ্লেষণের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য ও বিক্রয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা সহজ হয়। আবার, এর মাধ্যমে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মুনাফা বাড়ানোর কার্যক্রম নেওয়া যায়।
তাই ব্যবসায়ে সম আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
সব উদ্যোগই ব্যবসায় উদ্যোগ না কেন?
উত্তরঃ বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ আলাদা।
যেকোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাকে উদ্যোগ বলে। অন্যদিকে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠান স্থাপনকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলে। উদ্যোগে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মুনাফা অর্জন করা। উদ্যোগের মাধ্যমে সব ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু হয়। কিন্তু সব উদ্যোগকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলা যায় না।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা কাকে বলে?
উত্তরঃ যিনি ব্যবসায়ের উদ্যোগ নেন তাকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলে।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা, দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে ব্যবসায় স্থাপন ও সফলভাবে তা পরিচালনা করেন। ব্যবসায় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ের প্রাথমিক ঝুঁকি ও দায়-দায়িত্ব বহন করেন। একটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোক্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি।
ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিকটি বর্ণনা কর।
উত্তর : ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিক বলতে মূলত কারিগরি দিককে বোঝায়।
প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাই করা হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কীরূপ যন্ত্র ব্যবহার করা হবে, কী ধরনের প্রযুক্তি নির্ধারণ করা হবে ও তার ব্যয় কেমন হবে প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিক আলোচনা করে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা গেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হয়।
উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ কেন প্রয়োজন?
উত্তরঃ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য হাতে কলমে কাজ শেখানো হলো প্রশিক্ষণ।
এটি উদ্যোক্তাকে নির্দিষ্ট বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা নতুন বিষয়, কৌশল বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে। এতে দ্রুত ও কম খরচে ব্যবসায় পরিচালনা করে সফলতা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এসব তত্ত্ব ও কৌশল কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে তারা দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।
তাই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ কোনো কাজে ব্যর্থ হলে তার কারণ নির্ণয় করে পরবর্তী সময়ে একই কাজের জন্য ভুল সংশোধন করাকে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া বলে। এটি উদ্যোক্তার একটি অন্যতম গুণ।
একজন উদ্যোক্তা লক্ষ্য অর্জনে নিরলস চেষ্টা করেন। কোনো কারণে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করে তা সংশোধন করেন। ফল অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত উদ্যোক্তা অবিরাম শ্রম দিয়ে যান। যে কারণে ভুল বা ব্যর্থ হয়েছেন। তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেটাই হলো ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া।
তাই বলা যায়, উদ্যোক্তার বিফলতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতাই হলো ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া।
ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত বাধা মোকাবিলার উপায় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত বাধা দূর করার উপায় হলো বিমা।
বিমা চুক্তির মাধ্যমে বিমাকারী নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে চুক্তিপত্রে উল্লিখিত নির্দিষ্ট ঝুঁকির বিপরীত বিমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে। ফলে ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত বাধা দূর হয়। এছাড়া ব্যবসায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হতে পারে।
ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যবসায়ের আইনগত দিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো পণ্য প্রতীক বা ট্রেডমার্ক।
এটি পণ্যের স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে। সাধারণত ট্রেডমার্কের মেয়াদ হলো ৭ বছর। তবে কোনো মালিক যদি ঐ ৭ বছরের মধ্যে প্রতীক নবায়নের জন্য আবেদন করে তবে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য নবায়ন হয়।
আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বারবার নবায়ন করে ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অধিকার সংরক্ষণ করা যায়। এতে কোনো পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে ট্রেডমার্কটি শুধু ঐ রেজিস্টার্ড মালিকই ব্যবহার করতে পারেন।
বিমা একটি ব্যবসায় উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বিমা হলো বিমাকারী ও বিমাগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি, যেখানে বিমাকারী বিমাগ্রহীতাকে প্রিমিয়ামের বিনিময়ে নির্দিষ্ট ঝুঁকিতে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়।
এক্ষেত্রে বিমাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকি নেওয়ার বিনিময়ে বিমাগ্রহীতার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে থাকে। এ অর্থ অন্য কোনো ব্যবসায়ে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে। আর সম্ভাব্য ঝুঁকি কমিয়ে মুনাফা অর্জন থাকে এ বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে। এ অর্জিত মুনাফা বিমা ব্যবসায়ের কাজে বা বিমাগ্রহীতার ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যবহৃত হয়। এতে ঝুঁকি নিয়ে প্রিমিয়ামের অর্থ বিনিয়োগ করায় বিমা একটি ব্যবসায়।
কপিরাইট বলতে কি বোঝায়?
উত্তর : লেখক বা শিল্পী কর্তৃক তার সৃষ্টকর্মের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনগত অধিকার হলো কপিরাইট।
এটি একটি আইনগত ধারণা। এর উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টকর্ম নকল করা থেকে বিরত রেখে প্রকৃত লেখক, শিল্পী বা স্বত্বাধিকারীর স্বার্থ সুরক্ষা করা। কপিরাইট আইন অনুযায়ী একজন উদ্ভবক তার সৃষ্টকর্মের ওপর পূর্ণ অধিকার লাভ করেন। এর ফলে অন্য কেউ এটি নকল করতে পারে না। বই, প্রবন্ধ, নৃত্য, সংগীত কৌশল প্রভৃতি কপিরাইট আইনের আওতাভুক্ত।
কার্যারম্বের অনুমতিপত্র বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসায়িক কাজ শুরুর জন্য উদ্যোক্তাগণ নিবন্ধকের কাছ থেকে যে অনুমতি বা ছাড়পত্র লাভ করে, তাকে কার্যারম্বের অনুমতিপত্র বলে।
এটি পাওয়ার জন্য পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে বিবরণপত্র, ন্যূনতম চাঁদা সংগ্রহ এবং যোগ্যতাসূচক শেয়ার কেনার ঘোষণাপত্র নিবন্ধকের কাছে দাখিল করতে হয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে নিবন্ধক কার্যারম্বের অনুমতিপত্র দেয়। এ পত্র পাওয়ার পরেই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ব্যবসায় শুরু করতে পারে।
নিবন্ধনপত্র কাকে বলে?
উত্তর : প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও প্রমাণপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে নিবন্ধক যে পত্র ইস্যু করে সেটিই নিবন্ধনপত্র।
কোম্পানির জন্মসনদ হলো নিবন্ধনপত্র। পাবলিক এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির প্রবর্তনকালে কোম্পানির আইন অনুসারে নিবন্ধক বরাবর নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নিবন্ধকের জন্য আবেদন করেন। নিবন্ধকের খাতায় কোম্পানির নাম লিপিবদ্ধ করার প্রমাণ হলো নিবন্ধনপত্র।
নট্রামস কি? নট্রামসের উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ নট্রামস হলো শিক্ষা মন্ত্রাণালয় কর্তৃক পরিচালিত আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান কাজ হলো বেকার যুবক-যুবতীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও কম্পিউটার চালনা শিক্ষা দেওয়া। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিতে পারে। এভাবে বেকার সমস্যা সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিতকরণ নট্রামসের উদ্দেশ্য।
ব্যবস্থাপকরা কিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে?
উত্তরঃ ম্যানেজাররা পাঁচটি ধাপের প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যথা–
১. সমস্যা উপলব্ধি করা এবং সনাক্ত করা (Problem Recognition and Identification)
২. সনাক্তকরণ এবং বিকল্প মূল্যায়ন (Identification and Evaluation of Alternatives)
৩. বিকল্প নির্বাচন (Alternative Selection)
৪. কাজ করা (Action)
৫. ফলো আপ (Follow up)
উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরুপ–
উদ্যোগ
- যেকোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাকেই উদ্যোগ বলে।
- উদ্যোগে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
- উদাহরণ: স্কুলের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী পালনের বাধ্যতামূলক নয়।
ব্যবসায় উদ্যোগ
- মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে ব্যবসায় স্থাপনাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলে।
- ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মুনাফা অর্জন।
- উদাহরণ: মুদি দোকান প্রতিষ্ঠা করা একটি ব্যবসায় উদ্যোগ।