চতুর্থ অধ্যায় : তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া ও চুম্বকত্ব, পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র

চতুর্থ অধ্যায় : তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া ও চুম্বকত্ব, পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র

প্রশ্ন-১। তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো তড়িৎবাহী তারের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহ করলে এর প্রভাবে তারের চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়, একে তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া বলে।

প্রশ্ন-২। তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া কে আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ ১৮১৯ সালে ওয়েরস্টেড তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া আবিষ্কার করেন।

প্রশ্ন-৩। চৌম্বক বলের একক কি?

উত্তরঃ চৌম্বক বলের একক নিউটন।

প্রশ্ন-৪। তাড়িতচৌম্বক আবেশের আবিষ্কারক কে?

উত্তরঃ মাইকেল ফ্যারাডে।

প্রশ্ন-৫। তড়িৎ প্রবাহের ফলে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের মান কীসের ওপর নির্ভর করে?

উত্তরঃ তড়িৎ প্রবাহের ফলে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের মান মাধ্যমের ওপর। তথা মাধ্যমের চৌম্বক প্রবেশ্যতার ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন-৬। লরেঞ্জ বল কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো স্থানে একই সময়ে একটি তড়িৎক্ষেত্র ও একটি চৌম্বকক্ষেত্র বিদ্যমান থাকলে সেখানে একটি গতিশীল আধান যে লন্ধি বল অনুভব করে তাকে লরেঞ্জ বল বলে।

প্রশ্ন-৭। স্বকীয় আবেশ কাকে বলে?

উত্তরঃ একটি মাত্র বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনের ফলে যে তড়িৎ চৌম্বক আবেশ ঘটে তাকে স্বকীয় আবেশ বলে।

প্রশ্ন-৮। পারস্পরিক আবেশ কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো একটি কুন্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তন করলে নিকটবর্তী অন্য একটি কুণ্ডলীতে যে তাড়িতচৌম্বক আবেশ সৃষ্টি হয় তাকে পারস্পরিক আবেশ বলে।

প্রশ্ন-৯। এক ফ্যারাড কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো পরিবাহকের বিভব 1 ভোল্ট বাড়াতে যদি 1C আধানের প্রয়োজন হয়, তাহলে ঐ পরিবাহকের ধারকত্বকে এক ফ্যারাড বলে।

প্রশ্ন-১০। অ্যাম্পিয়ারের সংজ্ঞা কি?

উত্তরঃ শূন্য মাধ্যমে কোনো পরিবাহীর যে কোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এক সেকেন্ডে এক কুলম্ব (C) আধান প্রবাহিত হলে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে এক অ্যাম্পিয়ার (A) বলে।

প্রশ্ন-১১। 1 ওয়েবার কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনো কুণ্ডলীতে প্রতি সেকেণ্ডে যত সংখ্যক ফ্লাক্স পরিবর্তনের জন্য ঐ কুণ্ডলীতে 1 ভোল্ট বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তাকে 1 ওয়েবার বলে।

প্রশ্ন-১২। চৌম্বক নিগ্রাহিতা কাকে বলে?

উত্তরঃ চুম্বকত্ব হ্রাসের কারণসমূহ থাকা সত্ত্বেও কোনো একটি চুম্বক পদার্থের মধ্যে উৎপন্ন চৌম্বকত্ব ধরে রাখার ক্ষমতাকে ঐ পদার্থের চৌম্বক নিগ্রাহিতা বলে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রশ্ন-১৩। কুরিবিন্দু কাকে বলে?

 

উত্তরঃ তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে থাকলে যে তাপমাত্রায় কোনো ফেরোচৌম্বক পদার্থ, প্যারাচৌম্বক পদার্থে পরিণত হয়, তাকে ঐ ফেরোচৌম্বক পদার্থের কুরীবিন্দু বলে।

 

প্রশ্ন-১৪। চৌম্বক সংবেদ্যতা কাকে বলে?

 

উত্তরঃ ম্যাগনেটাইজেশন (I) ও চৌম্বক প্রাবল্যের (H) অনুপাতকে চৌম্বক সংবেদ্যতা বলে।

 

প্রশ্ন-১৫। চৌম্বক মোমেন্ট কাকে বলে?

 

উত্তরঃ কোনো বিদ্যুৎবাহী কুণ্ডলীর বিদ্যুৎপ্রবাহ এবং কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল ভেক্টরের গুণফলকে ঐ কুণ্ডলীর চৌম্বক মোমেন্ট বলে।

 

প্রশ্ন-১৬। চৌম্বক ধারকতা কাকে বলে?

 

উত্তরঃ চুম্বক বলের প্রভাব সরিয়ে নেওয়ার পর যে ধর্মের জন্য চৌম্বক পদার্থের মধ্যে কিছু পরিমাণ চুম্বকত্ব ধরে রাখা যায় তাকে ঐ পদার্থের চৌম্বক ধারকতা (Magnetic retentivity) বলে।

 

প্রশ্ন-১৭। চৌম্বক নিগ্রাহিতা বা সহনশীলতা কাকে বলে?

 

উত্তরঃ চুম্বকত্ব হ্রাসের কারণসমূহ থাকা সত্ত্বেও কোনো একটি চৌম্বক পদার্থের মধ্যে উৎপন্ন চুম্বকত্ব ধরে রাখার ক্ষমতাকে ঐ পদার্থের চৌম্বক নিগ্রাহিতা বা সহনশীলতা (Magnetic coercivity) বলে।

 

প্রশ্ন-১৮। চুম্বকায়ন মাত্রা বা তীব্রতা কাকে বলে?

 

উত্তরঃ চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রতি একক আয়তনের চৌম্বক ভ্রামককে উহার চুম্বকায়ন তীব্রতা বা মাত্রা (Magnetisation intensity) বলে।

 

প্রশ্ন-১৯। অ্যাম্পিয়ারের সুত্রটি বিবৃত কর।

 

উত্তরঃ কোনো বদ্ধ পথ বরাবর কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রের রৈখিক সমাকলন, পথটি দ্বারা বেষ্টিত ক্ষেত্রফলের ভেতর প্রবাহিত মোট প্রবাহমাত্রার μ০ গুণ।

 

প্রশ্ন-২০। হল ক্রিয়া কাকে বলে?

 

উত্তরঃ ফলক বা পাত আকৃতির পরিবাহীর মধ্যে দৈর্ঘ্য বরাবর তড়িৎ প্রবাহিত হলে এবং বেধ বা উচ্চতা বরাবর চৌম্বক ক্ষেত্র বিরাজ করলে, এর প্রস্থ বরাবর দুই প্রান্তের মধ্যে একটি বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে ‘হল ক্রিয়া’ বলে।

 

প্রশ্ন-২১। পৃথিবীর চৌম্বকত্ব কাকে বলে?

 

উত্তর : পদার্থবিজ্ঞানের যে শাখায় পৃথিবীর চুম্বকত্ব এবং এতদসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জানা যায় তাকে ভূ-চুম্বকত্ব বা পৃথিবীর চৌম্বকত্ব বলে।

 

প্রশ্ন-২২। চৌম্বক দ্বিপোল ভ্রামক (Magnetic dipole moment) কাকে বলে?

 

উত্তর : চৌম্বক দ্বিপোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোমেন্ট বা ভ্রামককে চৌম্বক দ্বিপোল ভ্রামক বা সংক্ষেপে চৌম্বক ভ্রামক বলে।

 

প্রশ্ন-২৩। বিদ্যুৎ চুম্বকত্ব কাকে বলে?

 

উত্তর : পদার্থবিদ্যার যে শাখায় বিদ্যুৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া আলোচনা করা হয় তাকে বিদ্যুৎ চুম্বকত্ব (Electromagnetism) বলে।

 

প্রশ্ন-২৪। কৃত্রিম চুম্বক কাকে বলে? এটি কত প্রকার ও কী কী?

 

উত্তরঃ কৃত্রিম উপায়ে যে চুম্বক তৈরি করা হয়, তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। কৃত্রিম চুম্বক দুই প্রকার। যথা: ক. স্থায়ী চুম্বক; খ. অস্থায়ী চুম্বক।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রশ্ন-২৫। চৌম্বক প্রাবল্য়ের একক ব্যাখ্যা কর।

 

উত্তরঃ চৌম্বক প্রাবল্যের একক টেসলা (T)। যে চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে লম্বভাবে lms-1 বেগে গতিশীল 1C চার্জের উপর 1N চৌম্বক বল ক্রিয়া করে, সেই চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্যকে এক টেসলা (1T) বলে।

 

প্রশ্ন-২৬। কোনো পরিবাহীর পরিবাহিতা 0.2 সিমেন্স বলতে কী বোঝায়?

 

উত্তরঃ কোনো পরিবাহীর পরিবাহিতা 0.2 সিমেন্স বলতে বোঝায় যে, ঐ পরিবাহকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য 1V হলে তার মধ্য দিয়ে 0.2A তড়িৎ প্রবাহ চলে।

 

প্রশ্ন-২৭। সুষম চৌম্বক ক্ষেত্রে গতিশীল চার্জের ওপর ক্রিয়াশীল বল কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল?

 

উত্তরঃ সুষম চৌম্বক ক্ষেত্রে গতিশীল চার্জের ওপর ক্রিয়াশীল বল নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের ওপর নির্ভরশীল-

 

i. চার্জের পরিমাণ (q)

 

ii. চৌম্বক ক্ষেত্রের মান (B)

 

iii. চার্জের বেগ (v)

 

iv. চৌম্বক ক্ষেত্র ও চার্জের গতির দিকের মধ্যবর্তী কোণ (θ)।

 

প্রশ্ন-২৮। কোনো কুণ্ডলীর স্বকীয় আবেশ গুণাংক 8H বলতে কী বোঝায়?

 

উত্তরঃ কোনো কুণ্ডলীর স্বকীয় আবেশ গুণাংক 8H বলতে বুঝায়, সেই কুণ্ডলীতে প্রতি সেকেন্ডে তড়িৎ প্রবাহ 1A হারে পরিবর্তিত হলে উক্ত কুণ্ডলীতে ৪V তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়।

 

প্রশ্ন-২৯। আপেক্ষিক প্রবেশ্যতা বলতে কী বোঝ?

 

উত্তরঃ কোন মাধ্যমের পরম প্রবেশ্যতা ও শূন্য মাধ্যমের পরম প্রবেশ্যতার অনুপাতকে উক্ত মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রবেশ্যতা বলে।

 

ধরা যাক, কোনো মাধ্যমের পরম প্রবেশ্যতা = μ এবং শূন্য মাধ্যমের পরম প্রবেশ্যতা = μ0

 

ঐ মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রবেশ্যতা,μr =μ/μ0।

 

প্রশ্ন-৩০। চৌম্বক ডোমেইন কাকে বলে?

 

উত্তরঃ ফেরোচৌম্বক পদার্থের 10−12m3 থেকে 10−8m3 আয়তনের মধ্যে 1016 থেকে 1019 সংখ্যক পরমাণু সংবলিত অসংখ্য চৌম্বক এলাকা থাকে যার মধ্যে চৌম্বক দ্বিপোলগুলো একই দিকে সজ্জিত থাকে; ফলে এরা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র চৌম্বকের ন্যায় আচরণ করে। এরুপ চৌম্বক এলাকাকে চৌম্বক ডোমেইন বলে।

 

প্রশ্ন-৩১। তড়িৎবাহী কুণ্ডলীকে চৌম্বক দ্বিমেরু বলে কেন?

 

উত্তরঃ কোনো কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে, যেদিক থেকে তাকালে কুণ্ডলীর মধ্যে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে তড়িৎ প্রবাহিত হয়, কুণ্ডলীটির সেই প্রান্তে উত্তর মেরু এবং এর বিপরীত প্রান্তে দক্ষিণ মেরুর সৃষ্টি হয়। এ কারণেই তড়িৎবাহী কুণ্ডলীকে চৌম্বক দ্বিমেরু বলে। আয়তাকার, বৃত্তাকার ইত্যাদি যেকোনো আকৃতিরই কুণ্ডলী হোক না কেন, প্রত্যেকেই এক একটি চৌম্বক ডাইপোল হিসেবে কাজ করে।

 

প্রশ্ন-৩২। চৌম্বক প্রাবল্য কীভাবে নিরূপণ করা যায়?

 

উত্তরঃ চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে যদি শূন্য বা বায়ু ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ না থাকে তবে কোনো বিন্দুতে উহার চারদিকে একক ক্ষেত্রফল দিয়ে ক্ষেত্রের সাথে লম্বভাবে যত সংখ্যক বলরেখা অতিক্রম করে তার সংখ্যা দিয়ে চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য নিরূপণ করা হয়।

 

প্রশ্ন-৩৩। তড়িৎবাহী কুণ্ডলীর ওপর কখন টর্ক ক্রিয়া করে?

 

উত্তরঃ চৌম্বক ক্ষেত্রের দরুন তড়িৎবাহী কুণ্ডলীর একটি অংশে যে বল ক্রিয়া করে, অপর অংশে যদি সমমানের কিন্তু বিপরীতমুখী বল ক্রিয়া করে, তবে কুণ্ডলীটি চলনগতিসম্পন্ন না হয়ে ঘূর্ণন গতিসম্পন্ন হয়। সমান মানের বলদ্বয়ের ক্রিয়ারেখা একই না হওয়ায় এক্ষেত্রে তখন টর্কের সৃষ্টি হয়।