চতুর্দশ অধ্যায় : বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো ও সামাজিকীকরণ, নবম-দশম শ্রেণি

প্রশ্ন-১। কোনটির মাধ্যমে মানুষ সমাজের একজন দায়িত্বশীল সদস্যে পরিণত হয়?

 

উত্তর : মানুষ সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজের একজন দায়িত্বশীল সদস্যে পরিণত হয়।

 

প্রশ্ন-২। কোনটি সমাজকাঠামোর মৌল সংগঠন?

 

উত্তর : পরিবার সমাজকাঠামোর মৌল সংগঠন।

 

প্রশ্ন-৩। পরিবার গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত কি?

 

উত্তর : পরিবার গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে বিবাহ।

 

প্রশ্ন-৪। দলবদ্ধ জীবন-যাপনের বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান কোনটি?

 

উত্তর : দলবদ্ধ জীবন-যাপনের বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার।

 

প্রশ্ন-৫। স্বামী-স্ত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতে পরিবার কয় ধরনের হয়ে থাকে?

 

উত্তর : স্বামী-স্ত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতে পরিবার তিন ধরনের হয়ে থাকে।

 

প্রশ্ন-৬। কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার কয় ধরনের হয়ে থাকে?

 

উত্তর : কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার দুই ধরনের হয়ে থাকে।

 

প্রশ্ন-৭। বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার পরিবার মাতৃতান্ত্রিক?

 

উত্তর : বাংলাদেশের খাসিয়া এবং গারোদের পরিবার মাতৃতান্ত্রিক।

 

প্রশ্ন-৮। আকারের ভিত্তিতে পরিবার কয় ধরনের হয়ে থাকে?

 

উত্তর : আকারের ভিত্তিতে পরিবার তিন ধরনের হয়ে থাকে।

 

প্রশ্ন-৯। বিশ্বের সভ্য দেশগুলোতে কোন ধরনের পরিবার প্রথা সর্বত্রই প্রচলিত?

 

উত্তর : বিশ্বের সভ্য দেশগুলোতে একক পরিবার প্রথা সর্বত্রই প্রচলিত।

 

প্রশ্ন-১০। কয় পুরুষের পারিবারিক বন্ধনের পরিবারই বর্ধিত পরিবার?

 

উত্তরঃ তিন পুরুষের পারিবারিক বন্ধনের পরিবারই বর্ধিত পরিবার।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রশ্ন-১১। বংশ মর্যাদা এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবার কয় ধরনের হয়ে থাকে?

 

উত্তরঃ বংশ মর্যাদা এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবার দুই ধরনের হয়ে থাকে।

 

প্রশ্ন-১২। কাদের মধ্যে মাতৃসূত্রীয় পরিবার ব্যবস্থা এখনো প্রচলিত?

 

উত্তরঃ খাসিয়া ও গারোদের মধ্যে মাতৃসূত্রীয় পরিবার ব্যবস্থা এখনো প্রচলিত।

 

বাসস্থান অনুসারে পরিবার কত প্রকার ও কি কি?

 

উত্তরঃ বাসস্থান অনুসারে পরিবার দুই প্রকার। যথা- ক) পিতৃ-আবাসিক পরিবার এবং খ) মাতৃ-আবাসিক পরিবার।

 

সম্প্রদায় বলতে কী বোঝায়?

 

উত্তরঃ সম্প্রদায় বলতে সাধারণত একই অঞ্চলে বসবাসকারী মানব গোষ্ঠীকে বোঝায়, যাদের মধ্যে ভাষাগত, ধর্মীয়, আচরণগত এবং অন্যান্য ব্যাপারে কতগুলো সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

 

উদাহরণ : চাকমা সম্প্রদায়, গারো সম্প্রদায়, গ্রামীণ সম্প্রদায় ইত্যাদি।

 

গণমাধ্যম কী?

 

উত্তরঃ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে সংবাদ, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বিষয়বস্তু, বিশেষ ধ্যান-ধারণা, বিনোদন প্রভৃতি পরিবেশন করার মাধ্যমই গণমাধ্যম। গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন প্রভৃতি।

 

বৈবাহিক সূত্রে পরিবার কত প্রকার?

 

উত্তরঃ বৈবাহিক সূত্রের ভিত্তিতে তিন ধরনের পরিবার দেখা যায়। যথা- একপত্নীক, বহুপত্নীক ও বহুপতি পরিবার। একপত্নীক পরিবারে একজন স্বামীর একজন স্ত্রী থাকে। আর বহুপত্নীক পরিবারে একজন স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবার একপত্নীক, তবে বহুপত্নীক পরিবারও সামান্য দেখা যায়। বহুপতি পরিবারে একজন স্ত্রী একাধিক স্বামী থাকে। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিবার দেখা যায় না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

একক পরিবার কাকে বলে?

 

উত্তরঃ যখন একজন স্বামী, একজন স্ত্রী এবং তাদের আবিবাহিত সন্তানদের নিয়ে পরিবার গঠন করে তখন তাকে একক বা অণু পরিবার বলে। একক পরিবারের মধ্যে দুই পুরুষের একত্রে বসবাস করার রীতি প্রচলিত আছে।

 

এক পত্নিক পরিবার কাকে বলে?

 

উত্তরঃ যেখানে মাত্র একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দুজন যৌথভাবে বসবাস করে তাকে এক পত্নিক পরিবার বলে। এই ধরনের পরিবারে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যেই যৌন সম্পর্ক সীমাবদ্ধ থাকে।

 

মাতৃপ্রধান পরিবার কাকে বলে?

 

উত্তরঃ যে পরিবারে সামগ্রিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভার মায়ের হাতে থাকে সে পরিবারকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।

 

অন্তর্গোত্র বিবাহভিত্তিক পরিবার কাকে বলে?

 

উত্তরঃ যখন কোনো ব্যক্তি নিজ গোত্রের মধ্যে বিয়ে করে তখন তাকে অন্তর্গোত্র বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে। এ ধরনের পরিবার হিন্দু সমাজে অধিক প্রচলিত। এ ধরনের বিয়ের পিছনে যুক্তি ছিল নিজ গোত্রের মধ্যে তথাকথিত রক্তের বন্ধন বা বিশুদ্ধতা রক্ষা করা।

 

মাতৃ আবাসিক পরিবার কাকে বলে?

 

উত্তরঃ বিবাহের পর যদি স্বামী তার স্ত্রীর মাতার গৃহে বসবাস করে তখন সেই পরিবারকে মাতৃ-আবাসিক পরিবার বলে। উদাহরণঃ খাসিয়া, গারো প্রভৃতি সমাজব্যবস্থায় এ জাতীয় পরিবার দেখা যায়।

 

পরিবারকে আয়ের একক বলা হয় কেন?

 

উত্তরঃ পরিবারের সদস্যরা ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য ঘরের বাইরেও কাজ করে থাকে। এজন্য পরিবারকে আয়ের একক বলা হয়।

 

‘সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া’– ব্যাখ্যা কর।

 

উত্তরঃ সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিশু জন্মের পর হতে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন ও খাপখাওয়ানোর প্রক্রিয়াই সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি যখন একপর্যায় হতে আরেক পর্যায়ে প্রবেশ করে তখন তাকে নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে চলতে হয়। এই খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়ার ফলে তার আচরণে পরিবর্তন আসে। নতুন নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি এবং নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপখাইয়ে চলার চেষ্টা করে। সুতরাং বলা চলে, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পরিবারকে প্রাথমিক শিক্ষার সুতিকাগার কেন বলা হয়?

পরিবারের মধ্যেই শিশুর সকল সামাজিক গুণের বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই পরিবারকে প্রাথমিক শিক্ষার সুতিকাগার বলা হয়। জন্মের পর শিশু পরিবারের মধ্যেই শিক্ষা লাভ করে। মাতাই শিশুর জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা। পরিবারের মধ্যেই মানব শিশু আচার, ব্যবহার, নিয়মানুবর্তিতা, নৈতিকতা, ধর্মীয় বিধি বিধান, আচার, আচরণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো শিশু পরিবার থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। পরিবার শিশুর আনুষ্ঠানিক এবং নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালয়। নৈতিকতার বীজ পারিবারিক মূল্যবোধ থেকেই শিশুর আচরণে বিকশিত হয়। এ কারণে পরিবারকে প্রাথমিক শিক্ষার সুতিকাগার বলা হয়।

পরিবার ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক কী?

উত্তরঃ পরিবার ও সমাজের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানি, একদল লোক যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এক সাথে হয়ে বসবাস করে, তখনই সমাজ গঠিত হয়। মানুষ সংঘবদ্ধতার জন্য প্রথমে গড়ে তোলে পরিবার তা বিস্তৃত হয়ে গড়ে উঠে সমাজ। অপরদিকে সমাজ স্বীকৃত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বসবাস করাকে সমাজ বলে। অর্থাৎ পরিবার গঠিত হতে হলে সমাজের স্বীকৃতির প্রয়োজন।

সমাজ বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগােষ্ঠীকে বােঝায়, যারা কোনাে সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়। অর্থাৎ একদল লােক যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তখনই সমাজ গঠিত হয়। সমাজের এ ধারণাটি বিশ্লেষণ করলে এর প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা – ক) বহুলােকের সংঘবদ্ধভাবে বসবাস এবং খ) ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে থাকে সাধারণ উদ্দেশ্য। তাছাড়া সমাজের সদস্যদের মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়- ঐক্য ও পারস্পরিক সহযােগিতা, নির্ভরশীলতা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি।
সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষকে নিয়ে সমাজ গড়ে উঠে। আর সমাজ মানুষের বহুমুখী প্রয়ােজন মিটিয়ে উন্নত ও নিরাপদ সামাজিক জীবন দান করে। সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়ােজনেই সমাজ গড়ে তােলে। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব, যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু, না হয় দেবতা। বস্তুত মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই সে নিজেকে বিকশিত করে।