প্রশ্ন-১। কৃষি বনায়ন কি?
উত্তরঃ কৃষি বনায়ন হলো এক ধরনের ভূমি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা যেখানে একই জমিতে বৃক্ষ, ফসল, পশু ও মৎস্যখাদ্য উৎপাদন করা হয় এবং কোনো উপাদান অন্য উপাদানকে ব্যাহত করে না।
প্রশ্ন-২। মাধ্যমের উপর নির্ভর করে নার্সারিকে কত ভাগে বিভক্ত করা যায়?
উত্তরঃ মাধ্যমের উপর নির্ভর করে নার্সারিকে ২ ভাগে বিভক্ত করা যায়।
প্রশ্ন-৩। কাষ্ঠল উদ্ভিদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে উদ্ভিদ হতে কাঠ পাওয়া যায় তাকে কাষ্ঠল উদ্ভিদ বলে।
প্রশ্ন-৪। বসত বন কাকে বলে?
উত্তরঃ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে বসতবাড়ির আশেপাশে স্বল্প পরিসরে গাছ লাগিয়ে যে বন তৈরি করা হয় তাকে বসত বন বলে।
প্রশ্ন-৫। বীজ সংরক্ষণ কী?
উত্তরঃ সংগৃহীত বীজ রোপণের আগ পর্যন্ত গুদামজাত করাকে বীজ সংরক্ষণ বলে।
প্রশ্ন-৬। মৎস্য চাষ কী?
উত্তরঃ মৎস্য চাষ হলো কোনো নির্দিষ্ট জলাশয়ে অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক উৎপাদন।
প্রশ্ন-৭। অস্থায়ী নার্সারি কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো পরিকল্পনার আওতায় ব্যাপক এলাকা জুড়ে বনায়ন করার জন্য সতেজ চারা অল্প সময়ে ও কম খরচে পেতে যে নার্সারি তৈরি করা হয়, তাকে অস্থায়ী নার্সারি বলে।
প্রশ্ন-৭। সামাজিক বনায়ন কী?
উত্তরঃ উদ্ভিদ-বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য মানুষ পরিকল্পনা করে নিজস্ব চেষ্টায় যে বন তৈরি করে তাই সামাজিক বনায়ন।
প্রশ্ন-৮। স্ট্রিপ বনায়ন কাকে বলে?
উত্তরঃ সড়ক ও বাঁধের ধারে কোথাও এক সাড়িতে, কোথাও দুই বা তিন সারিতে বনায়ন করা হয়ে থাকে যাকে স্ট্রিপ বনায়ন বলে।
প্রশ্ন-৯। বসতবাড়িতে কৃষি বনায়ন পদ্ধতি কী?
উত্তরঃ যে পদ্ধতিতে শাক-সবজি, খাদ্য, ফসল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এবং বিভিন্ন ধরনের বনজ, ফলদ ও শোভাবর্ধনকারী গাছপালা একসাথে উৎপাদিত হয় সেটাই বসতবাড়িতে কৃষি বনায়ন পদ্ধতি।
প্রশ্ন-১০। সাধারণত লিগিউম জাতীয় বৃক্ষ কোন পদ্ধতির কৃষি বনায়নে লাগানো হয়?
উত্তরঃ অ্যালি ক্রপিং পদ্ধতিতে লিগিউম জাতীয় বৃক্ষ লাগানো হয়।
প্রশ্ন-১১। পলিব্যাগের সাইজ ১৮ সেমি x ১২ সেমি হলে প্রতি বর্গমিটারে চারার সংখ্যা কয়টি হবে?
উত্তরঃ পলিব্যাগের সাইজ ১৮ সেমি x ১২ সেমি হলে প্রতি বর্গমিটারে চারার সংখ্যা ৪৫টি হবে।
প্রশ্ন-১২। অস্থায়ী নার্সারি কেন প্রয়োজন?
উত্তরঃ কোনো পরিকল্পনার আওতায় ব্যাপক এলাকা জুড়ে বনায়ন করার জন্য অস্থায়ী নার্সারি তৈরি করা হয়। যেমন- সড়ক ও জনপদ বিভাগ হতে নতুন রাস্তা নির্মাণের পর দু’পাশে গাছ লাগানোর জন্য অস্থায়ী নার্সারি তৈরি করা হয়। এতে চারা পরিবহন খরচ কমে এবং সতেজ চারা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন-১৩। মিশ্র বৃক্ষ চাষ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে বনায়ন ব্যবস্থায় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমন্বিত চাষ করা হয় তাকে মিশ্র বৃক্ষ চাষ বলে। মিশ্র বৃক্ষরোপণ করলে এলাকায় বসবাসকারী জনগণের জ্বালানি, পুষ্টি, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির চাহিদা মেটানো যায়। গ্রামীণ জনসাধারণের কাজের ক্ষেত্র বাড়ে।
প্রশ্ন-১৪। কৃষি বনায়ন কেন লাভজনক? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ একই জমিতে বৃক্ষ, ফসল, পশুখাদ্য ও মৎস্য উৎপাদন করাকে কৃষি বনায়ন বলে। এ বনায়নের মাধ্যমে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ফসলের পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিজ উপাদান উৎপাদন করা যায়। তাই কৃষি বনায়ন লাভজনক।
প্রশ্ন-১৫। আদর্শ বীজবৃক্ষ বলতে কী বোঝায়?
আদর্শ বীজ বৃক্ষ মাঝবয়সী হতে হয়। কারণ মাঝবয়সী গাছ থেকে ভালো মানের ফল পাওয়া যায়। আর ভালো ফল থেকে ভালো মানের বীজ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন-১৬। সারিবদ্ধ বনায়ন বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সড়ক ও বাঁধের ধারে কোথাও এক সারিতে, কোথাও দুই বা তিন সারিতে বনায়ন করা হয়ে থাকে। বৃক্ষরোপণের এ পদ্ধতিকে বলা হয় সারিবদ্ধ বনায়ন। সারিবদ্ধ বনায়ন সামাজিক বনায়নের একটি উৎপাদন কৌশল।
প্রশ্ন-১৭। কৃষি বনায়নের প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ একই সাথে একই জমিতে বহুমুখী বৃক্ষের চাষ করে বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোই হলো কৃষি বনায়নের উদ্দেশ্য। এ পদ্ধতিতে ভূমিকে উৎপাদনক্ষম করে তোলা যায়। ফলে ভূমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
প্রশ্ন-১৮। “পরিবেশগত দিক থেকে কৃষি বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম”— ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ কৃষি বনায়ন হলো কৃষিজ ও বনজ বৃক্ষের সম্মিলিত চাষাবাদ পদ্ধতি। কৃষি বনায়নে যে রাস্তা বা বাঁধের পাশে গাছ লাগানো হয় তা ঢালু থাকে। তাই যেসব গাছের শিকড় বেশি এলাকা জুড়ে থাকে সেসব রোপণ করা হয়। ফলে মাটিক্ষয় রোধ হয় ও উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের বনায়নে কৃষি ফসলের সাথে স্থান ও স্তরবিন্যাস করে বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল উদ্ভিদ ও পশু পালন করা হয়। পশুপাখির খাদ্য ও আবাসস্থলও সৃষ্টি হয়। ফলে মরুকরণ, বন্যা ও ভূমিধ্বস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে পরিবেশ জীবের বসবাস উপযোগী হয়। তাই পরিবেশগত দিক থেকে কৃষি বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন-২০। চারা তৈরির জন্য আমরা নার্সারির উপর নির্ভরশীল কেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশের অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গিয়ে বনজ সম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনায়ন করা দরকার। বনায়ন করতে সবল চারার প্রয়োজন। এ সবল চারার যোগান দেয় নার্সারি। আর এজন্যই আমরা নার্সারির উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন-২১। কৃষি বনায়নে বেশি এলাকাজুড়ে শিকড় থাকে এমন গাছ কেন নির্বাচন করতে হবে?
উত্তরঃ কৃষি বনায়নের একটি উদ্দেশ্য পরিবেশগত উন্নতি সাধন। মাটি ক্ষয়রোধ অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। কৃষি বনায়নে যে রাস্তা বা বাঁধের পাশে গাছ লাগানো হয় তা ঢালু থাকে। তাই নারিকেল, সুপারি প্রভৃতি একবীজপত্রী গাছ যাদের শিকড় বেশি এলাকাজুড়ে থাকে এমন গাছ লাগানো হয়। ফলে মাটির ক্ষয়রোধ হয়।
প্রশ্ন-২২। উঁচু বা নিচু এলাকার ওপর ভিত্তি করে গাছ নির্বাচন করা উচিত কেন?
উত্তরঃ নিচু ও মাঝারি নিচু এলাকায় সাধারণত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই এসব এলাকায় মিশ্র বৃক্ষরোপণের সময় জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে এমন বৃক্ষ বাছাই করা উচিত, যেমন- হিজল, রয়না, জারুল, মান্দার, কড়ই ইত্যাদি। আবার কিছু গাছ যেমন আম, কাঁঠাল মেহগনি, শাল, সেগুন, বেল ইত্যাদি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না বলে মাঝারি উঁচু ও উঁচু এলাকায় চাষ করা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন-২৩। কৃষি বনায়নকে আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি- ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ আমাদের দেশের বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এদেশের স্বল্প সংখ্যক ভূমি সক্ষম নয়। তাই বনায়নকে শুধু বনভূমিতে সীমাবদ্ধ না রেখে কৃষি বনায়নকে আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। সাধারণ কৃষি খামার, রাস্তা ও বাঁধের ধার, বাড়ির আঙিনা, প্রতিষ্ঠানের চারপাশে নিবিড় ও ব্যাপক কৃষি বনায়ন বিপ্লব ঘটানো প্রয়োজন।