রসায়ন প্রশ্ন ও উত্তর (পর্ব-২৮)

প্রশ্ন-১। এস্টার কাকে বলে?

উত্তরঃ জৈব এসিডের কার্বক্সিলিক গ্রুপের হাইড্রক্সিল গ্রুপ অ্যালকক্সি গ্রুপ (–OR) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে এস্টার উৎপন্ন হয়। সাধারণত জৈব এসিড ও অ্যালকোহল বিক্রিয়া করে এস্টার উৎপন্ন করে। সুতরাং জৈব এসিড ও অ্যালকোহলের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন যৌগকে এস্টার বলে।

 

প্রশ্ন-২। পলিথিন কী? পলিথিনের সংকেত

উত্তরঃ পলিথিন সাদা, অস্বচ্ছ ও শক্ত প্লাস্টিক পদার্থ, যার রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে–(C2H4)n। এটি একটি অপচনশীল জৈব যৌগ। উচ্চচাপ ও প্রায় 200°C তাপমাত্রায় নিকেল (Ni) প্রভাবকের উপস্থিতিতে ইথিলিনের অসংখ্য অণু পরস্পর সংযুক্ত হয়ে পলিথিন নামক পলিমার উৎপন্ন করে।

 

প্রশ্ন-৩। তন্তু কী?

উত্তরঃ তন্তু এক ধরনের জৈব যৌগ যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন যৌগ থেকে তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল ফেব্রিক্স শিল্পে পোশাক তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রশ্ন-৪। পাইরোলাইসিস কাকে বলে?

উত্তরঃ বায়ুর অনুপস্থিতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় পেট্রোলিয়ামকে বিয়োজিত করার প্রক্রিয়াকে পাইরোলাইসিস বলে।

 

প্রশ্ন-৫। মোম পোড়ালে কী ঘটে?

উত্তরঃ মোম একটি উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন। মোম বায়ুর অক্সিজেনে পোড়ালে তাপ ও আলো পাওয়া যায়। মোম, পোড়ালে প্রথমে মোমের গলন হয় যা ভৌত পরিবর্তন এরপর মোমের জ্বলন হয় যা রাসায়নিক পরিবর্তন। মূলত আমরা জ্বলন্ত মোম থেকে তাপ ও আলোক শক্তি পেয়ে থাকি।

মোম + O2 → CO2 + H2O + শক্তি (তাপ + আলো)

 

প্রশ্ন-৬। ক্যাটিনেশন কি?

উত্তরঃ ক্যাটিনেশন হলো কার্বন পরমাণুর অন্যতম প্রধান ধর্ম। এ ধর্মের কারণে কার্বন পরমাণুসমূহ পরস্পর একের পর এক যুক্ত হয়ে সরল শিকল, শাখা শিকল, বদ্ধ শিকল, শিকলযুক্ত বলয় ইত্যাদি অগণিত জৈব যৌগ গঠন করে থাকে।

 

প্রশ্ন-৭। বায়ু অণু বা প্রাণ অণু কাকে বলে?

উত্তরঃ যে জৈব অণুসমূহ কোষের ভেতরে অবস্থান করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নির্দিষ্ট কার্যধারা চালু রাখে তাদেরকে বায়ু অণু বা প্রাণ অণু বলে। যেমনঃ অ্যামাইনো এসিড, উচ্চতর ফ্যাটি এসিড, গ্লুকোজ, নিউক্লিয়োটাইড ইত্যাদি।

 

প্রশ্ন-৮। প্রাকৃতিক পলিমার কাকে বলে?

উত্তরঃ যে সকল পলিমার প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, সে সকল পলিমারকে প্রাকৃতিক পলিমার বলে। উদ্ভিদ, প্রাণী ও খনিজ উৎস হতে পাওয়া পলিমারসমূহকে বলা হয় প্রাকৃতিক পলিমার। যেমন : পাট, রাবার, উল, সিল্ক, সুতি, কাপড়, ফাইবার ইত্যাদি।

 

প্রশ্ন-৯। উইলিয়ামসন সংশ্লেষণ বিক্রিয়া কি?

উত্তরঃ উইলিয়ামসন সংশ্লেষণ বিক্রিয়া হলো সোডিয়াম অ্যালকক্সাইডকে অ্যালকোহলীয় দ্রবণে অ্যালকাইল হ্যালাইডসহ উত্তপ্ত করে অ্যালকক্সি অ্যালকেন বা ইথার তৈরির প্রক্রিয়া।

 

প্রশ্ন-১০। IUPAC এর পূর্ণরূপ কি? IUPAC বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ IUPAC এর পূর্ণরূপ হলাে International Union of Pure and Applied Chemistry অর্থাৎ আন্তর্জাতিক রসায়ন ও ফলিত রসায়ন সংস্থা। এ সংস্থা জৈব যৌগের নামকরণের জন্য একটি উপযােগী বিধিমালা প্রণয়ন করে।

 

প্রশ্ন-১১। এক্সটিংকশন গুণাঙ্ক কি?

উত্তরঃ আপতিত আলোক রশ্মির তীব্রতা এক-দশমাংশ হ্রাস করতে ঐ মাধ্যমের যে পুরুত্ব প্রয়োজন হয়, এর ব্যস্তানুপাতিক মানকে বলা হয় হ্রাস গুণাঙ্ক বা এক্সটিংকশন গুণাঙ্ক।

 

প্রশ্ন-১২। লবণের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

উত্তরঃ লবণের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেওয়া হলো–

১. স্বাভাবিক তাপমাত্রায় লবণ পানিতে দ্রবণীয়।

২. লবণ বিভিন্ন মাধ্যমে পানি শোষণ করে।

৩. লবণ কঠিন কেলাস গঠন করে।

৪. লবণ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক।

৫. লবণ অনেক বেশি পরিমাণ আয়োডিন ধারণ করতে পারে।

৬. লবণ আয়নিত হয়ে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন গঠন করে।

 

প্রশ্ন-১৩। গাঠনিক সমানুতা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ সমানু যৌগসমূহের আণবিক গঠনের কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য যে ধরনের সমানুতার উদ্ভব হয় তাকে গাঠনিক সমানুতা বলে। গাঠনিক সমানুতা পাঁচ প্রকার। যথা– ১. শিকল সমানুতা; ২. কার্যকরী মূলক সমানুতা; ৩. অবস্থান সমানুতা; ৪. টটোমারিজম; ৫. মেটামারিজম।

 

প্রশ্ন-১৪। রেডিয়াম ধাতু তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গনের ফলে কিসে পরিণত হয়?

উত্তরঃ রেডিয়াম ধাতু তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গনের ফলে লেড বা সিসায় পরিণত হয়।

 

প্রশ্ন-১৫। ইথেন পানিতে অদ্রবণীয় কেন?

উত্তরঃ ইথেন কার্বন ও হাইড্রোজেনের মধ্যে তড়িৎ ঋণাত্মকতার তেমন পার্থক্য নেই বলে অণুতে কোন পোলারিটির উদ্ভব হয় না। এজন্য অণুসমূহের মধ্যে ডাইপোল-ডাইপোল আকর্ষণ বা হাইড্রোজেন বন্ধন সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। ফলে ইথেন পানিতে অদ্রবণীয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রশ্ন-১৬। দুধ পাস্তুরিত করতে সাধারণত কত সময়ের জন্য কত তাপ প্রয়োগ করা হয়?
উত্তরঃ দুটি পদ্ধতিতে দুধকে পাস্তুরিত করা যায়। ১. লুই পাস্তুর পদ্ধতি; ২. শর্ট টাইম পদ্ধতি। দুই পদ্ধতির জন্য দুই ধরনের তাপ প্রয়োগ করতে হয়। নিচে তা উল্লেখ করা হলো :
১. লুই পাস্তুর পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে দুধকে ৩০ মিনিট যাবৎ ৬২.৮°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে হঠাৎ তাপমাত্রা কমিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
২. শর্ট টাইম পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে দুধকে ১৫ সেকেন্ড যাবৎ ৭১.৭°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়।

প্রশ্ন-১৭। বিক্রিয়া তাপ বা বিক্রিয়া এনথালপি কাকে বলে?
উত্তরঃ রাসায়নিক বিক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তাপীয় পরিবর্তন। তাপীয় পরিবর্তন ছাড়া কখনও কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না। সাধারণভাবে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপের যে পরিবর্তন ঘটে তাকে বিক্রিয়া তাপ বা বিক্রিয়া এনথালপি বলে।

প্রশ্ন-১৮। জেট ফুয়েল বা জেট জ্বালানি কি?
উত্তরঃ জেট ফুয়েল হচ্ছে এক প্রকারের মিশ্র জ্বালানি যা আংশিক পাতনের সাহায্যে অশোধিত পেট্রোলিয়াম থেকে প্রস্তুত করা হয়। জেট ফুয়েল এরোপ্লেনের টারবাইন ইঞ্জিন ও জ্বালানি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়।

প্রশ্ন-১৯। CO কে নীরব ঘাতক গ্যাস বলা হয় কেন?
উত্তরঃ CO বর্ণহীন, গন্ধহীন গ্যাস। তাই পরিবেশে এর উপস্থিতি মানুষ সহজে বুঝতে পারে না। CO নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রাণিদেহে ঢুকে রক্তের হিমােগ্লোবিনের সঙ্গে জটিল যৌগ গঠন করে এবং প্রাণিদেহে অক্সিজেন পরিবহনে ব্যাহত ঘটায়। ফলে বিভিন্ন শ্বাস কষ্টজনিত রােগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া O2 পরিবহনে অসুবিধার কারণে শরীরের টিস্যুতে O2 সরবরাহের জন্য হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পড়ে। ফলে হৃদরােগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ঘটনাটি প্রাণীর অগােচরে ঘটে। এজন্য CO কে নীরব ঘাতক বলা হয়।

প্রশ্ন-২০। গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি এক ধরনের পার্টিশন ক্রোমাটোগ্রাফি, যেখানে চলমান দশাটি একটি নিস্ক্রিয় গ্যাস এবং স্থির দশাটি কঠিন পৃষ্ঠদেশের ওপর অধিশোষিত উচ্চ স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট তরল। নমুনাকে গ্যাসীয় দশায় অন্তঃক্ষেপ (inject) করা হয়। যেখানে নমুনা বাষ্পীভূত হয়ে তরল দশায় (কলামে) প্রবাহিত হয়। স্থির দশায় উপাদানসমূহের আপেক্ষিক আসক্তির ওপর নির্ভর করে পৃথকীকরণ সম্পন্ন হয়। নমুনায় বাষ্প, গ্যাস এবং তরল দশায় বিভাজিত হওয়ার কারণে উপাদানসমূহ বিশ্লিষ্ট হয়।