স্বরধ্বনি কাকে বলে? স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কি কি?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখের কোথাও কোনো বাধা পায় না, তাদের স্বরধ্বনি বলে। যেমন : অ, আ, ই, ঈ ইত্যাদি।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্বরধ্বনিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, ‘যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ব্যতিরেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিস্ফুটভাবে উচ্চারিত হয় এবং যাহাকে আশ্রয় করিয়া অন্য ধ্বনি প্রকাশিত হয়, তাহাকে স্বরধ্বনি (Vowel) বলে।’

স্বরধ্বনির উচ্চারণ
স্বরধ্বনি উচ্চারণে তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে জিভের উচ্চতা, জিভের অবস্থা ও ঠোঁটের অবস্থা। এ ছাড়া কোমল তালুর অবস্থাকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

জিভের উচ্চতা : জিভের উচ্চতা অনুসারে স্বরধ্বনিগুলো সাধারণত চার ধরনের হয়।
(ক) উচ্চ-স্বরধ্বনি : স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ উপরে উঠলে তা হয় উচ্চ-স্বরধ্বনি।
(খ) নিম্ন-স্বরধ্বনি : জিভ সবচেয়ে নিচে অবস্থান করে যে স্বরধ্বনি উচ্চরিত হয়, তা নিম্ন-স্বরধ্বনি। যেমন– আ, এ।
(গ) উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি : এ ধরনের স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ উচ্চ-স্বরধ্বনি তুলনায় নিচে এবং নিম্ন-স্বরধ্বনি তুলনায় উপরে থাকে। যেমন– এ, ও।
(ঘ) নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি : এ জাতীয় স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ নিম্ন-স্বরধ্বনির তুলনায় উপরে এবং উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনির তুলনায় উপরে ওঠে। যেমন– অ্যা, ও।

স্বরধ্বনির শ্রেণিবিভাগ
গঠন অনুসারে স্বরধ্বনিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন : ক. মৌলিক স্বরধ্বনি ও খ. যৌগিক স্বরধ্বনি। উচ্চারণ অনুসারে স্বরধ্বনিগুলোকে আবার নানা ভাগে ভাগ করা যায়- ক. হ্রস্বস্বর, খ. দীর্ঘস্বর, গ. অর্ধস্বরধ্বনি, ঘ. অনুনাসিক স্বরধ্বনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ক. মৌলিক স্বরধ্বনি : একটিমাত্র মূল স্বরধ্বনিকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। মৌলিক স্বরধ্বনি মোট সাতটি। যেমন : অ, আ, ই, উ, এ, এ্যা, ও। এগুলোকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাগ করা যায় না। বাংলা ভাষায় ‘এ্যা’ ধ্বনিটি থাকলেও তার জন্য কোনো বর্ণ নেই।

খ. যৌগিক স্বরধ্বনি : যদি পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি দ্রুত উচ্চারণের ফলে একটি যুক্তধ্বনিতে রূপ নেয়, তবে তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন : অ + ই = ঐ, অ + উ = ঔ। এসব ধ্বনিকে দ্বিস্বর, সন্ধিস্বর বা যৌগিক স্বরও বলা হয়। বাংলা বর্ণমালায় শুধু ঐ এবং ঔ-এ দুটি যৌগিক বর্ণকে মৌলিক বর্ণের মতো স্থান দেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টি। যেমন :

অ + ই = অই (বই)
অ + য় = অয় (হয়, সয়)
আ + ই = আই (খাই, নাই, ভাই)
আ + এ = আয় (গায়, যায়)