ওআইসি’র (OIC) বর্তমান পূর্ণ রূপ হচ্ছে– Organization of Islamic Co-operation। প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ণ রূপ হচ্ছে Organization of Islamic Conference বা ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা। এটি মুসলমানদের প্রথম একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা যদিও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পটভূমিকায়, তবু এর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকাকেও ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে মুসলিম বিশ্বের কতিপয় নেতার সক্রিয় ভূমিকায় এ সংগঠনটির জন্ম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময় মুসলমান সম্প্রদায়ের কোথাও কেউ আক্রান্ত বা বিপদাপন্ন হলে ওআইসি কোনো না কোনোভাবে এগিয়ে এসেছে। তবে সব ক্ষেত্রেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে নি। বাংলাদেশ ওআইসিভুক্ত দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ওআইসি প্রতিষ্ঠার পটভূমি (Background of the establishment OIC)
১৯৬৭ সালের জুনে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট ইসরাইল হঠাৎ করেই জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে। ২৫ আগস্ট ১৪টি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কায়রোতে আলোচনায় বসেন। ঐ বৈঠকে সৌদি আরব প্রস্তাব করে যে, বিষয়টি যেহেতু সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য স্পর্শকাতর তাই এটি নিয়ে আলোচনার জন্য সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করা জরুরি। মরক্কো, সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, সোমালিয়া, মালয়েশিয়া এবং নাইজারকে নিয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ১৯৬৯ সালের ২২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মরক্কোর রাজধানী রাবাতে। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ওআইসি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এ ঐতিহাসিক সম্মেলনে ২৪টি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগদান করে। সম্মেলন শেষে যুক্ত ঘোষণায় আরও অনেক বিষয়ের সাথে বলা হয় ইসরাইলকে অবিলম্বে ১৯৬৭ সালের পূর্ব সীমানায় ফিরে যেতে হবে। তাছাড়া সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল পিএলও-কে (Palestine Liberation Organization) তার জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সর্বসম্মত সমর্থন প্রদান।
ওআইসি’র গঠন (Composition of OIC)
১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওআইসি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৫ টি রাষ্ট্র। যথা : মিশর, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, শাদ, গিনি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্দান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালি, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজার, সেনেগাল, সোমালিয়া, সুদান, তিউনেশিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৫৭। পরবর্তীতে যেসব রাষ্ট্র সদস্য হয়েছে, সেগুলো হলো : বাহরাইন, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিরিয়া, সিয়েরা লিওন, বাংলাদেশ, গ্যাবন, গাম্বিয়া, গিনি বাসাউ, উগান্ডা, বারকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, ইরাক, কমোরোস, মালদ্বীপ, জিবুতি, বেনিন, ব্রুনেই, নাইজেরিয়া, আলবেনিয়া, আজারবাইজান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, মোজাম্বিক, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, সুরিনাম, টোগো, গায়না ও আইভরি কোস্ট। ওআইসি’র সদর দপ্তর সৌদি আরবের জেদ্দায়। মালয়েশিয়ার টেংকু আবদুর রহমান ওআইসি’র প্রথম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত হন।
ওআইসি’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and objectives of OIC)
নিম্নে ওআইসি’র ৭টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে দেওয়া হলো :
১। সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইসলামি সংহতি বৃদ্ধি করা।
২। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এবং কাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা সংহত করা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করা।
৩। সুবিচারভিত্তিক আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রয়োজনীয় সমর্থন দান।
৪। সকল প্রকার বর্ণ-বৈষম্যের মূল উৎপাটন এবং সব রকমের উপনিবেশবাদের বিলোপ সাধনে কাজ করা।
৫। পবিত্র স্থানসমূহের নিরাপত্তা বিধানের সংগ্রামকে সমন্বিতভাবে সুসংহত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন করা এবং তাদের অধিকার আদায় ও দেশ মুক্ত করার কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান।
৬। মুসলমানদের মান-মর্যাদা, স্বাধীনতা ও জাতীয় অধিকার সংরক্ষণের সকল সংগ্রামে মুসলিম জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং শক্তি যোগানো। সদস্য দেশসমূহ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
ওআইসি (OIC) এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ–
➤ ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (OIC) এর দাপ্তরিক ভাষার সংখ্যা হচ্ছে– ৩।
➤ মুসলমান প্রধান না হয়েও যে দেশটি ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সদস্য– উগান্ডা।
➤ OIC-এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়– মরক্কো।
➤ OCI-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়– তিন বছর পর পর।
➤ OIC-এর পূর্ণরূপ– Organization of Islamic Co-operation (ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা)।
➤ ওআইসি (OIC) গঠিত হয়– ১৯৬৯ সালে রাবাতে।
➤ OIC-এর প্রথম মহাসচিবের নাম– টেংকু আবদুল রহমান।
➤ ওআইসি মহাসচিবের মেয়াদকাল– ৫ বছর।
➤ ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC)-এর প্রধান কার্যালয় বা সচিবালয় অবস্থিত– জেদ্দায়।
➤ ওআইসি এর বর্তমান মহাসচিব যে দেশের নাগরিক– সৌদি আরবের।
➤ বাংলাদেশে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে– ১৯৭৪ সালে।