ভ্রূণীয় মেসোডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন-প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুই হলো পেশি টিস্যু।
পেশি টিস্যুর প্রকারভেদ
পেশি টিস্যু তিন প্রকারের হয়। যথা –
১) ঐচ্ছিক টিস্যু,
২) অনৈচ্ছিক টিস্যু এবং
৩) হৃদপেশি।
১) ঐচ্ছিক পেশি
ঐচ্ছিক পেশি প্রাণীর ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। এর কোষগুলো নলাকার, শাখাবিহীন এবং আড়াআড়ি ডোরাযুক্ত। এ পেশির কোষগুলোতে সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে। এরা দ্রুত সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে পারে। এ ধরনের পেশিকে ডোরা কাটা বা কঙ্কাল পেশিও বলা হয়। এরা অস্থি তন্ত্রে সংলগ্ন থাকে। যেমন : মানুষের হাড় এবং পায়ের পেশী সমূহ।
ঐচ্ছিক পেশির কাজঃ এরা বিভিন্ন অস্থির ঐচ্ছিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন এবং চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
২) অনৈচ্ছিক পেশি
অনেক বেশি প্রাণীর ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত ও প্রসারিত হয় না। এরা মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না। এজন্য এধরনের পেশিকে মসৃণ পেশীও বলা হয়। এরা মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তনালী এবং পৌষ্টিক নালীর প্রাচীরে থাকে।
অনৈচ্ছিক পেশির কাজঃ এরা প্রধানতঃ দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সঞ্চালনে অংশ নেয়। যেমন অন্ত্রের ক্রমসংকোচন।
৩) হৃদপেশী
মেরুদন্ডী প্রাণীদের হৃদপিণ্ড এক ধরনের বিশেষ অনৈচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত। এ বিশেষ ধরনের পেশিকে বলা হয় হৃদপেশি। এদের কোষগুলো নলাকৃতির, শাখান্বিত এবং আড়াআড়ি দাগযুক্ত। এ টিস্যুর কোষ গুলোর মধ্যে নিবেশিত ফলক থাকে। এদের সংকোচন-প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। অর্থাৎ হৃদপেশীর গঠন ঐচ্ছিক পেশির ন্যায়। এদের কোষগুলো শাখার সাহায্যে পরস্পর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে, এ পেশির কোন স্থানে স্পন্দন হলে মুহূর্তের মধ্যে তা সকল কোষে ছড়িয়ে পড়ে। হৃদপিন্ডের সকল হৃদপেশি একত্রে সমন্বিতভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এ পেশি কখনও ক্লান্ত হয় না এবং ক্রমাগত একটি নির্দিষ্ট ছন্দে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে থাকে।
- হৃদপেশির কাজঃ এরা অনেকটা ছান্দিক গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
পেশি টিস্যুর বৈশিষ্ট্য
পেশি টিস্যুর বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো–
১. পেশি টিস্যু ভ্রূণের মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন হয়।
২. এরা সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যু।
৩. এদের মাতৃকা অনুপস্থিত।
৪. পেশিকোষগুলো সরু, লম্বা ও তন্তুময়।
৫. পেশি টিস্যু সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন, চলন ও অভ্যন্তরীণ পরিবহনে সাহায্য করে।