সেন্ট্রিওল (Centriole) কাকে বলে? সেন্ট্রিওলের অবস্থান, গঠন এবং কাজ

প্রাণীকোষ ও কিছু উদ্ভিদকোষে যে অঙ্গাণু স্বপ্রজননক্ষম, নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থিত এবং একটি গহ্বরকে ঘিরে ৯টি গুচ্ছ প্রান্তীয় অণুনালিকা নির্মিত খাটো নলে গঠিত তাকে সেন্ট্রিওল বলে। বিজ্ঞানী ভেন বেনডেন (Van Benden) ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সেন্ট্রিওল শনাক্ত করেন এবং ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান জীববিজ্ঞানী থিওডোর বোভেরী (Theodor Bovery) এর বিশদ বিবরণ দেন।

সেন্ট্রিওলের অবস্থান

শৈবাল, ছত্রাক, ব্রায়োফাইট, টেরিডোফাইট, জিমনোস্পার্ম অনেক ধরনের উদ্ভিদে এবং অধিকাংশ প্রাণীতে সেন্ট্রিওল পাওয়া যায়। প্রোক্যারিওটিক কোষ, ডায়াটম, ঈস্ট ও অ্যানজিওস্পার্মে এটি দেখা যায় না। সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি এটি অবস্থান করে। সংখ্যায় একজোড়া।

 

সেন্ট্রিওলের গঠন

সেন্ট্রিওল নলাকার, প্রায় ০.২৫ মাইক্রোমিটার (um) ব্যাস সম্পন্ন ও ৩.৭ মাইক্রোমিটার (um) লম্বা। এরা দেখতে বেলনাকার, দুমুখ খোলা পিপার মতো। প্রত্যেক সেন্ট্রিওল প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা– প্রাচীর বা সিলিন্ডার ওয়াল, ত্রয়ী অণুনালিকা বা ট্রিপলেটস এবং যোজক বা লিংকার।

 

সেন্ট্রিওল প্রাচীর ৯টি ত্রয়ী অণুনালিকা দিয়ে গঠিত। প্রত্যেক অণুনালিকা সমান দূরত্বে অবস্থিত এবং তিনটি করে উপনালিকা নিয়ে গঠিত। পরস্পর সংলগ্ন তিনটি উপনালিকাকে যথাক্রমে A, B, এবং C নামে চিহ্নিত করা হয়। উপনালিকাগুলো পার্শ্ববর্তী অণুনালিকার সঙ্গে এক ধরনের ঘন তন্তুর সাহায্যে যুক্ত থাকে। সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার এবং সেন্ট্রোস্ফিয়ারসহ সেন্ট্রিওলকে সেন্ট্রোজোম বলে। সেন্ট্রিওল প্রধানত প্রোটিন, লিপিড ও ATP নিয়ে গঠিত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেন্ট্রিওলের কাজ

  • সেন্ট্রিওলের প্রধান কাজ কোষ বিভাজনকালে মাকুতন্তু গঠন করা এবং ক্রোমোজমের প্রান্তীয় গমনে সাহায্য করা।
  • সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোষে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টি করাও এর কাজ।
  • শুক্রাণুর লেজ গঠন করতেও এটি সাহায্য করে।
সেন্ট্রিওল না থাকলে জীবদেহে যে সমস্যা হয়
সেন্ট্রিওল অঙ্গাণুটি সাধারণত প্রাণিকোষে দেখা যায়, তবে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদকোষে যেমন- ছত্রাক কোষে অনেক সময় দেখা যায়। জীবকোষে এ অঙ্গাণুটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অঙ্গাণুটির অনুপস্থিতিতে জীবের কোষ বিভাজনে সমস্যা হবে। ফলে জীবদেহের গঠন ও বিকাশ সঠিকভাবে ঘটবে না। এতে জীবের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা দিবে।
অঙ্গাণুটির অনুপস্থিতিতে ক্রোমােসােমের গঠনও ঠিকভাবে হবে না। ক্রোমােসােম বংশগতির বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক। সুতরাং ক্রোমােসােমের গঠন ঠিকভাবে না হলে জীবের সঠিক বৈশিষ্ট্য এক বংশ থেকে আরেক বংশে স্থানান্তরিত হবে না। ফলে নতুন প্রজন্মে বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা দেখা দিবে। নতুন বৈশিষ্ট্য অনেক সময় জীবদেহে জটিল রােগ সৃষ্টি করে থাকে।
সবশেষে বলা যায়, এ অঙ্গাণুটি না থাকলে জীবের প্রজননে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে। কেননা সেন্ট্রিওল শুক্রাণুর লেজ গঠনে বিশেষ অবদান রাখে। তাই এর অনুপস্থিতিতে শুক্রাণুর লেজ গঠিত না হলে যৌন জননের সময় শুক্রাণু সাতার কেটে ডিম্বাণুর নিকট পৌছতে পারবে না, এতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটবে না। ফলে জাইগােট তৈরি হবে না। এতে জীব তার সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। অর্থাৎ সেন্ট্রিওলের অনুপস্থিতিতে জীবদেহে উল্লেখিত সমস্যাগুলাে দেখা দিতে পারে।