যে পদ্ধতিতে সূর্যের আলোয় সবুজ উদ্ভিদেরা তাদের নিজের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে। সালোকসংশ্লেষণ শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ photos (অর্থ: আলোক; এখানে সূর্যালোক) ও synthesis (অর্থ: সংশ্লেষণ, বা তৈরি করা) এর সমন্বয়ে গঠিত।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উপাদান হলো CO2, পানি ও আলো। সালোকসংশ্লেষণ মূলত উদ্ভিদের পাতায়, তবে কচি কাণ্ডেও হতে পারে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি ২টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা : আলোক পর্যায় ও অন্ধকার পর্যায়।
১। আলোক পর্যায় : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার যে পর্যায়ে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ATP ও NADPH2 তে সঞ্চারিত হয় তাকে সালোকসংশ্লেষণের আলোক পর্যায় বলে।
সালোকসংশ্লেষণ এর গুরুত্ব
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি সমগ্র জীবজগতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিতে একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করতে পারে। কোনাে প্রাণীই তার নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। খাদ্যের জন্য তাই সমগ্র প্রাণিকুলকে সম্পূর্ণভাবেই সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্য তৈরি হয় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে O2 ও CO2 এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে তা জীবজগতের জন্য হয় হুমকিস্বরূপ। সকল জীব শ্বসন প্রক্রিয়ায় O2 গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে O2 গ্যাসের স্বল্পতা এবং CO2 গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 গ্রহণ করে এবং O2 ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমণ্ডলে O2 ও CO2 গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। ফলে বেঁচে রয়েছে জীবকুল। সংক্ষিপ্ত এ আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটির গুরুত্ব জীবজগতের জন্য অপরিসীম।